ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেকর্ড ভাঙল সর্বকালের

প্রকাশনার সময়: ০৭ জুন ২০২৪, ০৮:২৬

নানা নিয়ম-বিধি করা হচ্ছে। ঋণ আদায়ে দেয়া হচ্ছে সুবিধা। তবে কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। অর্থনীতির বিষফোঁড়া খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ব্যাংকগুলোর অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা আর্থিক চিত্রে ফুটে উঠতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সব রেকর্ড ভেঙেছে। গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছে।

খেলাপী ঋণ বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, সরকারী ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে। পাশাপাশি খেলাপী হওয়া সুদ যুক্ত হওয়ার কারণেও খেলাপী ঋণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, খেলাপী ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোতে তদারকী বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের খেলাপী ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ফলে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকার-বেসরকারী, বিদেশী ও বিশেষায়িত সব ধরনের ব্যাংকেই খেলাপী ঋণ বেড়েছে।

বার্ড ফ্লুর নতুন ধরনে প্রথম মৃত্যু

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরে সরকারী ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৮৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ মার্চে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সরকারী খাতের বেসিক ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির (বিডিবিপি) খেলাপী ঋণ ৮৭৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে সরকারী ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ খেলাপী ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ২৭ শতাংশ।

বাজেটের দিন বাড়ল সূচক-লেনদেন

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণখেলাপী ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বিদেশী ব্যাংকগুলোর ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ ঋণখেলাপী ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিশেষায়িত এই দুই ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, খেলাপী ঋণের হার ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

সবচেয়ে দামী ছত্রাক

এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারী ব্যাংকেও খেলাপী ঋণের লাগাম পরানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকী, সাবেক ও বর্তমান আমলাদের পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকও খেলাপী ঋণ কমাতে পারছে না। ফলে তিন মাসে খেলাপী ঋণ এত পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো ব্যাংকের খেলাপী ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপী ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। তবে উল্টো এখন খেলাপী ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকের বড় গ্রাহকদের প্রায় সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠ ও বিভিন্ন পদে রয়েছেন। তাঁদের ঋণগুলো তদারকীর বাইরে থেকে যাচ্ছে। আগে ভালো ছিল, এমন কিছু ঋণও এখন খেলাপী হয়ে পড়ছে। খেলাপী চিহ্নিত করার নতুন নিয়মের কারণে ভবিষ্যতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তাঁরা মনে করেন।

খেলাপী ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসার মতোই খেলাপী ঋণ মডেলে পরিণত হয়েছে। সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক কারণে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এখন যে পরিস্থিতিতে এসেছে, এত খারাপ অবস্থায় আগে কখনো যায়নি। অবস্থার উন্নতি না হলে খেলাপী কমবে না। এ অবস্থা অবশ্যই কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সুশাসন আনতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ