ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

সংকট উত্তরণের চেষ্টা

প্রকাশনার সময়: ০৭ জুন ২০২৪, ০৮:১৬ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ০৮:২১

ডলার সংকট। ব্যাহত বিদ্যুৎ উৎপাদন। কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টায় আমদানিতে কড়াকড়ি। বিদেশি ঋণ পরিশোধের তাগিদ। রয়েছে আইএমএফের নানা শর্তের বেড়াজাল। এদিকে মূল্যস্ফীতির পারদ আকাশছোঁয়া—সেটাতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টার শেষ নেই। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নানা চাপ সামলে ‘সংকট উত্তরণের চেষ্টা’য় জাতীয় সংসদে উচ্চভিলাষী বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নানা সংকটে তছনছ হাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশার মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এ বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে নতুন অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে তার খুব একটা মিল পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, এটা ইতিবাচক। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তার আশপাশেও থাকবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ৫ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১০ শতাংশের সমান। তবে চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজেটে মোট ঘাটতি ধরেছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট। এছাড়া অন্য বছরগুলোর মতো পাল্লা দিয়ে এবার বাজেটের আকার বাড়ছে না। আগে এক বছর থেকে অন্য বছর বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছিল ১০ শতাংশের বেশি হারে। তবে এবার বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশের কম।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থের সংস্থান কম থাকায় বাজেট ছোট রাখার পরামর্শ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। সংশোধিত আকারকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে ৮২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাড়ানো হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।

বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে বলে সরকার ধরে নিয়েছে। এ আয়ের মধ্যে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে কর। করের মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত অংশ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত অংশ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া করবহির্ভূত প্রাপ্তি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আর অনুদান পাওয়া যাবে বলে ধরে নেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়লেও ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কম। অবশ্য সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৬ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৪ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বেশি।

এছাড়া আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের মধ্যে পরিচালন অংশ ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন অংশ ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। উন্নয়ন অংশের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে এটি মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।

এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। সঙ্গে থাকছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ। আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা, ভর্তুকি ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও পেনশন ১ লাখ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে চায় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে এখন আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ। পাশাপাশি ডলার-সংকট ও ডলারের বাড়তি দাম সরকারকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও বেশি চাপে ফেলেছে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। অর্থাৎ নানা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখছেন স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের। দেশের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে আনবে সরকার। চলতি অর্থবছরের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসছে আমদানি শুল্ক কাঠামোয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপায় দেখাবেন অর্থমন্ত্রী, আবার দেশীয় শিল্প সুরক্ষায়ও কিছু প্রস্তাব থাকবে। বাতিল হবে এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা। সীমিত হবে লাগেজ সুবিধা। সাধারণত, অনুমোদিত গাড়ি আমদানিতে কোনো শুল্ক কর দিতে হয় না সংসদ সদস্যদের। সাধারণ পাঁচ বছরের জন্য একটি গাড়ি আমদানিতে এ সুবিধা পান এমপিরা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ সুবিধা আর থাকছে না। এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে মোট করভার হবে ৪৩ শতাংশ।

বাজেটে ৬০ শতাংশ অর্থের উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর থেকে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ হিসেবে আসবে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ। আর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ আসবে বৈদেশিক অনুদান থেকে। এই হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ৩২ দশমিক ১ শতাংশ অর্থের উৎস হিসেবে থাকছে ঋণ ও অনুদান।

এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে ১ দশমিক ৯ ও কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। আর দেশীয় উৎস থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ২ শতাংশ। বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ধরা হয়েছে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪.২ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ বছরের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মক্ষম সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান, কৃষির উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রসার, উপযুক্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের জীবনমানের সুরক্ষা প্রদান করা হবে। সর্বোপরি নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক ভিত্তি রচনা হবে আমাদের এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য।

এবারের বাজেটে যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো— ১. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ২. বিজ্ঞান শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবন সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ৩. কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ৪. মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত ও সমপ্রসারিতকরণ ৫. তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ৬. সম্ভাব্য সব সেবা ডিজিটালাইজ করাসহ সর্বস্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার ৭. ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ ৮. ২০৩১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য নির্মূলকরণ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সাধারণ দারিদ্র্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনা ৯. শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ১০. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ ১১. জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখা।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। চার বছর পর এবার আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাক না কেন কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহারে এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।

বিগত দিনের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক ২০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করেছিলেন। ওই অর্থবছরেও ৯৮ শতাংশ করদাতা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন।

চার বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কালো টাকা সাদা করার সময় বা এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে কেউ যেন অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলতে পারে, এ জন্য ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে এনবিআর।

এ বিষয়ে কথা বললে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ বলেন, আমাদের দেশ হলো আমদানিনির্ভর দেশ। রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি। স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার অনেক বেড়েছে। ডলারের এই রেট যদি অব্যাহত থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখানে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন সেটা সম্পূর্ণ অবাস্তব।

তিনি বলেন, বাজেটের এই বিশাল ঘাটতি তো ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে পূরণ করতে হবে। এমন বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। দুইটি কারণে সরকারের পক্ষে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। প্রথমত, বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে ও বৈদেশিক ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেটা পূরণ হয় না। দ্বিতীয়ত, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের অদক্ষতার কারণেও বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও অনেক বিভাগ আছে যেগুলো বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয়ও করতে পারেনি। এছাড়া বাজেট হওয়া উচিত বাস্তবসম্মত ও মানুষের জন্য কল্যাণকর বাজেট। তা হলে সেটা সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ