সিলেট নগরে মধ্যরাত থেকে টানা ভারী বৃষ্টিতে ডুবল শতাধিক এলাকা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে সুরমা নদী টইটম্বুর। তাই বৃষ্টির পানি নগরের ছড়াগুলো দিয়ে নদীতে মিশতে পারছে না। এতে নগরে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
আজ সোমবার (৩ জুন) সকাল ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছিল। নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার (২ জুন) সকাল ও বিকালে কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে রাত থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের অন্তত শতাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করে, আবার কোথাও ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমেছে। বিভিন্ন বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। অনেকের রান্নাঘরও তলিয়ে গেছে।
রাতে বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, তেরোরতন, সাদারপাড়, সোবহানীঘাট, যতরপুর, কুশিঘাট, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, পায়রা, দরগামহল্লা, মুন্সীপাড়া, হাওয়াপাড়া, নাইওরপুল, সোনারপাড়া, বালুচর, মীরের ময়দান, কাষ্টঘর, পুলিশ লাইনস, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, খাসদবির, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, লালদিঘিরপার ও মেজরটিলা এলাকা মধ্যরাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকার সড়কও তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে দোকানে পানি ঢুকে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা রিকশা কিংবা হেঁটেই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্তর বাসা নগরের জামতলা এলাকায়। তিনি বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় তার বাসায় পানি ঢুকেছিল। মধ্যরাতের ভারী বৃষ্টিতে তার বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে আসবাবসহ জরুরি জিনিসপত্র ভিজে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানিও হু হু করে বাড়ছে। এ ভোগান্তি কবে দূর হবে, এ চিন্তায় আছেন।
উপশহর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম (৫৪) ভোর পৌনে ৫টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাদের এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি সুরমা নদীর পানিও নালা-নর্দমা দিয়ে চলে এসেছে। তার ঘরেও হাঁটুর ওপরে পানি। বাইরের ময়লা-আবর্জনা ভেসে ঘরে ঢুকেছে। খুবই বিশ্রী ও অসহায় অবস্থায় আছেন। এরই মধ্যে বাসার অনেক জিনিস পানিতে ভাসছে। পানি ক্রমশ বাড়তে থাকায় মানুষ এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে ছুটছেন।
রাত সাড়ে ৩টার দিকে যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে বন্যার কারণে সুরমা নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নগরের পানি ছড়া-খাল দিয়ে নদীতে গিয়ে মিশতে পারছে না। কোথাও কোথাও বরং নদীর পানি ছড়া দিয়ে নগরে ঢুকেছে। এখন ভারী বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। সকালবেলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু, শুকনো খাবার বিতরণসহ যাবতীয় কার্যক্রম নেওয়া হবে।
এর আগে ২৯ মে রাতে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টি হয়। এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্যাকবলিত সিলেট সিটি করপোরেশনের কিছু এলাকা ও আটটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িও প্লাবিত হয়েছে। তবে দুই দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও গতকাল রাত থেকে ভারী বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ