গপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ফের রাজপথে সক্রিয় হতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। কিন্তু এবারও বৈঠকের তালিকায় নেই জামায়াতে ইসলামী। তবে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে যুক্ত করার জন্য বিএনপিকে চাপ প্রয়োগ করছে সমমনা দল ও জোটগুলো। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে বিএনপিকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। যুক্তি হিসেবে সমমনারা বলছেন, জামায়াতের কর্মীরা যে কোনো আন্দোলনে কঠোর ভূমিকা পালন করে। সে ভূমিকা অনেক সময় প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দেয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, ১২ দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ কয়েকটি দল জোটের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মত, জোটের বাইরেও যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে পৃথক কর্মসূচী পালন করেছে তাদের সবাইকে একমঞ্চে আনা উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলন থাকা সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে অধিকাংশ দল ও জোট সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করার জন্য মতামত দিয়েছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল আন্দোলনে জামায়াতকে পাশে রাখার কথা বললেও আগের মতোই বিরোধিতা করেছেন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরীক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা আ স ম আব্দুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার কাছে জামায়াত প্রসঙ্গে জানতে চায় বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। তারা জামায়াতের বিষয়ে কোনো মতামত না দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি বিএনপির ওপর ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে মঞ্চের নেতা সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি জোট আন্দোলনে জামায়াতকে সঙ্গী করার বিষয়ে আপত্তি জানান। তবে জামায়াত আগের মতো পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে মতামত দেন এ দুই নেতা।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সখ্য বেড়েছে। গত রমজানে রাজনীতিকদের সম্মানে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ছাড়াও দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিমসহ চারজন অংশ নেন। যদিও গত বছরের ইফতারে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।
একই সময়ে জামায়াতের ইফতার মাহফিলেও অংশ নেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে জামায়াতে ইসলামী। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই অনলাইন ও অফলাইনে এমনকি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে নির্বাচনের প্রচারণা চালায় নেতাকর্মীরা। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিএনপি তাদের অবস্থান জামায়াতকে জানায়। এর পর বিএনপির অনুরোধের কারণেই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে জামায়াত। এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, বিভিন্ন দলের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। তবে এটি প্রাথমিক আলোচনা। এসব মতামত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। সময় ও পরিস্থিতির আলোকে টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে অনেকের এতে আপত্তিও রয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, গত ১২ মে থেকে টানা পাঁচ দিন যুগপৎ আন্দোলন শরিকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি প্রথম পর্বের বৈঠক। দ্বিতীয় পর্বে আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। এসব বৈঠকে যেই মতামত আসবে তা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যুগপতের চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে আমরা মূলত ব্যর্থ হয়েছি। সেই সময় আমরা বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্তভাবে কর্মসূচী পালন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছি। আন্দোলনে জামায়াতকে যদি রাখা হয় এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এগোই তাহলে মানুষের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে।’
১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপি মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তারা আমাদের কর্মসূচী প্রণয়নে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমরা দ্রুতই আলোচনা করব।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আন্দোলনে সব দলের ঐক্য হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়ে ওঠেনি। বিএনপিকে বলেছি, সামনে আন্দোলনে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করতে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা প্রায় সব দলই জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে বিএনপিকে মতামত দিয়েছে।’ গণ অধিকার পরিষদের নেতা আবু হানিফ নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি। বিএনপি আমাদের পরামর্শগুলো তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করবে এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া আন্দোলনে সমন্বয়হীনতা কাটাতে সব দলের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে আন্দোলনের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নয়া শাতাব্দীকে বলেন, ‘সমমনা দল ও জোটগুলো যুগপৎ আন্দোলন করবে, আর যারা বাইরে রয়েছে তারা তাদের মাতো করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। নতুন করে ইচ্ছা করলেই যুগপৎ আন্দোলনে তো আর কাউকে যুক্ত করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের বিষয়ে বিএনপিকে কে কি মতামত দিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। সরকারবিরোধী অনেক দলই তো তাদের মতো করে আন্দোলন করছে। জামায়াত আগেও যেমন নিজেদের মতো করে আন্দোলন করেছে এখনো সেভাবে চালিয়ে যাবে তাতে কোনো সমস্যা থাকার কথা না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে অধিকাংশ দল ও জোট মতামত দিলেও কিছু দল আবার আপত্তি জানিয়েছে। এসব মতামত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। সময় ও পরিস্থিতির আলোকে টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘বর্তমানে জামায়াত বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থের ইস্যু, ধর্মীয় ইস্যু, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজস্ব ধারায় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সামনের রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সময়ের চাহিদা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জামায়াত আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ।’
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ