বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা এবং বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা দুইটিই বেড়ে চলেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে স্বস্তির বৃষ্টির সঙ্গে আতঙ্ক হয়ে এসেছে বজ্রপাত। বৃষ্টি আর ঝড় হলেই বজ্রপাতে মৃত্যুর একাধিক খবর পাওয়া যাচ্ছে। গরম বেশি হওয়ায় চলতি বছর বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে গত এপ্রিল থেকে মে মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও মহিলা ১১ জন। আবার মে মাসের গত ৮ দিনে ৪৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা।
আর মে মাসে এক দিনেই মারা গেছেন ১১ জন এবং ৯ জন আহত হয়েছেন। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) গবেষণা সেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির মতে, বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের মধ্যে বেশির ভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ সংখ্যা শতকের কাছাকাছি চলে গেছে। বাংলাদেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মূলত আবহাওয়ার ধরনে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাত বেড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরন ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।
যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় গাছের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) সভাপতি ড. কবিরুল বাশার জানান, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুইটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ, বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যে সব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদি পশু। ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদি পশুও মারা যায়। তিনি আরও বলেন, অনেকে মনে করেন ওই সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেয়া নিরাপদ, আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘর বা পাকা স্থাপনার নিচে।
তার মতে, সনাতন পদ্ধতিতে লাইটনিং অ্যারেস্টার লাগালে বজ্রপাতে হতাহতের হাত থেকে বাঁচা যায়। এতে খরচ কম। একটি বাড়িতে ১০ হাজার টাকা খরচ করেই লাগানো যায়। সরকার হাওড় এবং খোলা জায়গায় এগুলো লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারে। সাধারণত বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রপাত হয়। আর গেল কয়েক বছর ধরে সেই বজ্রপাতে ঘটছে ব্যাপক প্রাণহানি। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়েনি বরং বেড়েছে মৃত্যুর খবর জানার পরিমাণ। বজ্রপাতে আহতও হন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. ফাতিমা আক্তার বলেন, বজ্রপাতের পরিমাণ বা সংখ্যা বেড়েছে, এ ক্ষেত্রে আমার কিছুটা সন্দেহ আছে। আমি বলব, আগের চেয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমাদের এখন বেশি হয়।
কারণ, আমাদের সরকারের ব্যবস্থা আছে, তাতে অনেক আগেই জলীয় বাষ্প শনাক্ত হয়। কিন্তু কেন হয় বজ্রপাত বা বজ্রঝড়? তাপমাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বজ্রপাতের সম্পর্ক। তাপমাত্রা যত বাড়বে, তখন জলীয় বাষ্প বাড়বে, বাড়বে মেঘে মেঘে ঘর্ষণে সৃষ্ট বজ্রপাতও। আর তাই চলতি মৌসুমে শক্তিশালী বজ্রপাতের শঙ্কাও রয়েছে।
ড. ফাতিমা আক্তার আরও বলেন, উত্তপ্ত পৃথিবীতে কিন্তু সব রকম এক্সট্রিম ঘটনার পরিমাণও বেড়ে যাবে। কারণ, যত উত্তপ্ত বাতাস, তত বেশি আমরা বলি অস্থিতিশীল বায়ুমণ্ডলে আপৎ বেশি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে তাপ সঞ্চালন যত বেশি বাড়বে তত বেশি মেঘ, বৃষ্টি ও বজ্রপাত হবে।
ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়। কৃষকের জন্য পরামর্শ দিয়ে এসএসটিএফের গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলিম বলেন, খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় জুতা পায়ে রাখতে হবে। বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তবে আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলে মাঠে না থেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার কথাও বলা হয়। বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান করা বিপজ্জনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, তারা বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পাঠাতে আটটি বজ্রপ্রবণ জেলায় বজ্রপাত শনাক্তকরণ সেন্সর স্থাপন করেছে। আর একটি পাইলট প্রকল্পের কাজ চলছে, যাতে নির্দিষ্ট এলাকায় উপস্থিত লোকজনকে বার্তা পাঠানো যায়।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা, নোয়াখালী, যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগ আগে বজ্রপ্রবণ ছিল। এখন সারা দেশেই বজ্রপাত হয়। আর এই সময়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে বজ্রপাত অবধারিত। তাই মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই সময় তাপ বেশি থাকার কারণে বজ্র মেঘ তৈরি হয় বেশি। আর এই মেঘের স্থায়িত্ব সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা।’ জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে বছরে ২০ জনেরও কম মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশে গাছপালা কেটে ফেলা বিশেষ করে খোলা মাঠে উঁচু গাছ ধ্বংস করে ফেলা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর তিনশোরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। এটা এলার্মিং। আমরা লাইটনিং অ্যারেস্টার লাগানোর একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু এখানো প্ল্যানিং কমিশন ওটা পাস করেনি। আর কত জায়গায় এটা লাগাতে হবে তারও কোনো সমীক্ষা নেই। এটা বেশ কস্টলি। আর আমাদের যে আশ্রয়কেন্দ্র সারা দেশে আছে সেগুলোকে বজ্রপাতের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করছি। নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও হবে। তবে সবই আন্ডার প্রসেস বলতে পারেন।’
ফিনল্যান্ড ভিত্তিক বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বজ্রপাত প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আর প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় হলেও বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। এবারও ঝড়বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে বজ্রপাত। বিশ্লেষকদের মতে, শহরে বেশির ভাগ ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু তেমন হয় না। কিন্তু গ্রামে তা না থাকা ও বড় গাছপালা কমে গিয়ে খোলা মাঠের কারণে সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাদের কথা দেশের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ সেখানকার বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই।
বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওড় এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খোলা জায়গায় যেখানে উঁচু কোনো গাছ নেই বা বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেই সেখানে যারা থাকেন তারা শিকার হন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে বজ্রপাতে কম বেশি ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। গত এক যুগে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। বজ্রপাতে ২০২৩ সালে ৩৪০ জন, ২০২২ সালে ২৭৪ জন, ২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১৬০ মারা গেছেন। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম জানান, ‘আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে বা ঝড় বৃষ্টি শুরুর সংকেত পাওয়া গেলে মানুষকে এমন কোনো স্থাপনায় আশ্রয় নিতে হবে যা বিদ্যুৎ কুপরিবাহী। কোনোভাবেই গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। কারণ গাছ বিদ্যুৎ পরিবাহী। গাছের নিচে আশ্রয় নিলে গাছের বিদ্যুৎ মানুষকে আক্রান্ত করবে।’
বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রতিরোধ ও মানুষের জীবন বাঁচাতে সারা দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি তাল গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে সারা দেশে ৩৮ লাখ চারা রোপণের পর দেখা যায় তা এক বছরের মধ্যেই অযত্নে-অবহেলায় মারা যায়। এই পরিকল্পনা যথার্থ ছিল না বলে মনে করেন আবদুল আলীম। কারণ তালগাছ রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও এগুলো বড় হয়ে মানুষের চেয়ে উঁচু হতে ২০-৩০ বছর সময় লেগে যায়। আবদুল আলীম বলেন, ‘প্রয়োজন হলো ফাঁকা জায়গাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র এবং টাওয়ার স্থাপন করা। টাওয়ারের উপরে লাইটেনিং প্রটেকশন সিস্টেম বসাতে হবে। এর দুইটি পদ্ধতি আছে লাইটেনিং অ্যারেস্টর ও এয়ার টার্মিনাল। অল্প সময়ে সহজ পদ্ধতি হলো বজ্র নিরোধক দণ্ড। এগুলো বসাতে হবে। দীর্ঘ পরিকল্পনায় তাল গাছ, নারকেল গাছ লাগানো যেতে পারে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, ‘তালগাছ প্রকল্প আমরা বাতিল করেছি। এটা কোনো ফল দেয়নি। আর তালগাছ বড় হতে অনেক বছর সময় লাগে। এখন আমরা লাইটনিং অ্যারেস্টারসহ লাইটনিং শেল্টার নির্মাণ এবং আর্লি ওয়ার্নিং ফর লাইটনিং, সাইক্লোন অ্যান্ড ফ্লড-এই দুইটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর বাইরে বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করেছি। পর্যায়ক্রমে আরো বজ্রপাতপ্রবণ জেলায় এগুলো বসানো হবে।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে ২৫০-৩০০ লোক মারা যান। এর মূল কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এক ডিগ্রি উষ্ণতা বাড়লে ১২ শতাংশ বজ্রপাত বেড়ে যায়।’ আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপদ আসবেই। কিন্তু প্রাণহানি কমাতে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষার উপায় সর্বস্তরে পৌঁছানোর তাগিদ তাদের। বজ্রপাত রোধে বিল্ডিং কোড মেনে প্রতি ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিতে জোর দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। সে সঙ্গে তালগাছের মতো দীর্ঘ গাছ রোপণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু সেই গাছ সড়কের পাশে নয় বরং খোলা মাঠে লাগালেই বেশি কার্যকর বলে মনে করেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
ঢাকায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪০ শতাংশ ভবন ধসে যাবে: রাজধানীর অদূরে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ফল্টে যদি দিনের বেলায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়বে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত আরবান আর্থকোয়েক রেজিলেন্স সেমিনারে এসব তথ্য জানান হয়। সেমিনারে আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী তাঁর উপস্থাপন পর্বে বলেন, ঢাকায় কাঁচা-পাকা মিলিয়ে ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৬টি ভবন আছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৭টি পাকা বা কংক্রিটের ভবন। আধা পাকা ভবন আছে ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৬২০টি। আব্দুল লতিফ বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে দিনের বেলা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীর ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫ (৪০.২৮ %) হাজার ভবন ধসে পড়বে।
দিনের বেলায় এই ভূমিকম্প হলে মারা যাবে ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ, আহত হবে ২ লাখ ২৯ হাজার। ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নিমাণে সরকারকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। সিলেটের ডাউকি চ্যুতি রেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি (১.৯১ %) ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় ভূমিকম্পটি হলে ১৬ হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটবে। আহত হবে ২৮ হাজার মানুষ। এ মাত্রার ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নিমাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হেলালী বলেন, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরে সরকারী, আধা সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশনের ভবনগুলোর ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে ৩ হাজার ২৫২টি ভবনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৮৭টি ভবন পাওয়া যায়, যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ করা সম্ভব। আর ৪২টি ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেগুলোকে অপসারণ করার কথা বলা হয়।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ