ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

যেসব কারণে কমে যাচ্ছে মহিষের দুধ উৎপাদন

প্রকাশনার সময়: ০১ জুন ২০২৪, ১৩:১৩ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১৩:৩৩

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস আজ। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়। বলা হয়, আমিষের চাহিদার আট শতাংশ আসে দুগ্ধ থেকে।

তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির অভাবে চারণভূমিতে লবণাক্ত পানির পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে কমেছে ঘাস। কমেছে মিষ্টি পানিও। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে মহিষ। দেখা দিচ্ছে রোগবালাই। কমে যাচ্ছে মহিষের ওজন ও দুধ উৎপাদন। লোকালয়ে ঘাসের অভাব এবং জায়গা সংকটের কারণে বিভিন্ন চর ও বনাঞ্চলের চারণভূমিতে পালন করা হয় মহিষ। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় আর শীত উপেক্ষা করে মহিষ বিভিন্ন দল বা বাথানে বিভক্ত হয়ে আকাশের নিচে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে খাবার খায়।

গত এপ্রিলের তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন বনাঞ্চলের ছোট ছোট খাল-বিলে পানি কমে অনেকাংশ শুকিয়ে গেছে। এতে দেখা দিয়েছে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। এ লবণাক্ত পানি খেয়ে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে বহু মহিষের শরীরে। তাছাড়া তাপপ্রবাহে চরাঞ্চলের ঘাস শুকিয়ে গিয়ে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

চারণভূমিতে পুকুর কেটে মাটির কিল্লা তৈরি করে দিলে অন্তত মহিষের নিরাপত্তা এবং মিষ্টি পানির অভাব পূরণ হবে বলে মনে করেন গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। তিনি বলেন, ‘‌মহিষ পালন চরাঞ্চলের মানুষের কাছে একটি লাভজনক সম্পদ। এ সম্পদের নানা সমস্যা সমাধানে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’

রায়পুর মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ভারত থেকে ২৫০টি গর্ভবতী মহিষ ও বাছুর আমদানি করা হয়। দেশে দুধ উৎপাদন বাড়ানো, উপকূলের জনগোষ্ঠী ও সমবায় কৃষকদের ভাগ্যেন্নয়নে এসব উন্নতজাতের মহিষ আনা হয়।

শুক্রবার (৩১ মে) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সংকটে রায়পুর কেন্দ্রটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বর্তমানে সেখানে ১২২টি মহিষ রয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার মহিষের দুধ সংগ্রহ হতো। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ৮০ লিটার।

রায়পুর মহিষ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আবু বকরের ভাষ্যমতে, টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতি লিটার ১২০ টাকা দামে দুধ বিক্রি হচ্ছে। এখানে মহিষের সংখ্যা কম থাকায় এখন উৎপাদন কম হচ্ছে।

বাথান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের মেঘনা নদীর দ্বীপচরগুলোতে মহিষের বাথান রয়েছে। সেখান থেকেই মহিষের দুধ আসে। বিশেষ করে রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, তেলিরচর, মৌলভীর চর, চর মুজাম, চর আলেকজান্ডার, চর বাদাম; কমলনগর উপজেলার চর কাঁকড়া, মাইজের চর, চর শামছুদ্দিন; সদর উপজেলার চর রমনী মোহন, মেঘারচর; রায়পুর উপজেলার হাজীমারা, টুনির চর, কানিবগারচর, চরকাছিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাথান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। দিনে প্রায় ১০ টনেরও বেশি দধি বিক্রি হয়। ১৫০-২০০ টাকা কেজি ধরে দিনে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার দধি বিক্রি হয়। বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সমাজউন্নয়নকর্মী সানা উল্লাহ সানু বলেন, সরকার একটু নজর দিলেই চরাঞ্চলে মহিষ পালনে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বেকার সমস্যা লাঘবের পাশাপশি মাংস-দুধের ঘাটতি পূরণ হবে। তবে যেভাবে মহিষ পালন কমছে তা নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এটি হতাশাজনক।

রায়পুরের ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী দিলীপ ঘোষ বলেন, মহিষের দুধের পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় এর চাহিদাও বেশি। প্রতিদিন আমি রায়পুর ও পাশের বরিশালেল চর থেকে ১৫০ থেকে ২০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করি। এছাড়া মহিষ প্রজনন কেন্দ্রের টেন্ডারও আমি পেয়েছি। এসব দিয়ে পনির, মিষ্টি-দধি তৈরি করা হয়।

জেলা পরিষদের সদস্য (রামগতি) মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, চরে আমাদের ২০০ থেকে ৩০০ মহিষ রয়েছে। কয়েক বছর আগে ৫০০ থেকে ৬০০ ছিল। চরে মানুষের বসতি, চাষাবাদ বৃদ্ধি, খাদ্য-ঘাস সংকট, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত মাটির কিল্লা নির্মাণ না করাসহ বিভিন্ন কারণে দিনদিন মহিষ পালন কমছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে মালিকরা লোকসানে পড়েন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র দাবি করছেন, লক্ষ্মীপুরে মহিষের দুধ উৎপাদন কমেনি। চরাঞ্চলে খামারিরা মহিষকে প্রচুর ঘাস খাওয়ায়। তাদের মহিষ পালন ও দুধের উৎপাদন বাড়ানো লক্ষ্যে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ