ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‌‌‘ওয়াটার থিওরি’ অনুসরণ করেই তদন্তে সফলতা

প্রকাশনার সময়: ৩০ মে ২০২৪, ১৬:০০

এমপি আনার হত্যার যৌথ তদন্ত সফল হয়েছে জানিয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন, আনার হত্যার ঘটনায় ডিবির ভারত সফর শতভাগ সফল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) কলকাতা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

কলকাতায় খুন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ইতোমধ্যেই এক নারীরসহ তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা। তাদের এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ‌‌‘ওয়াটার থিওরি’র সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর অর্থ তিনি উপর থেকে পানির শব্দ শুনেছিলেন। এরপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে অনুরোধ করে কমোড, সেপটিক ট্যাংক ও সুয়ারেজ লাইন পরীক্ষা করা হয়। এসময় সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কেজি মাংস।

‘প্রাথমিকভাবে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া এই মাংস এমপি আনারের মনে করা হলেও এ ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক এবং ডিএনএ টেস্ট জরুরি জানিয়ে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে চিঠি দিয়ে এখানকার লাশের টুকরো বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।’

উদ্ধারকৃত এই মাংস এমপি আনারের লাশের টুকরো কিনা, তা পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই সেই নমুনা পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (CFSL)। প্রয়োজনে করা হবে ডিএনএ টেস্টও। সেক্ষেত্রে কলকাতায় ডাকা হয়েছে এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফিরদৌস ডরিনকে।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা সিআইডিকে অনুরোধ জানিয়েছি এই পরীক্ষাগুলো যেন খুব দ্রুততার সাথে করা হয়।’

ডিএনএ টেস্ট করার জন্য এমপি আনারের কন্যা ডরিন খুব শিগগিরই কলকাতা আসবেন। ভারতে আসার জন্য সম্ভবত তিনি ভিসাও পেয়ে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় পৌঁছান গোয়েন্দা প্রদানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। কলকাতা থেকে তারা যান নিউটাউন থানায়। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও)-কে সাথে নিয়ে তারা কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেন। এরপর যথাক্রমে নিউটাউনের সঞ্জীবা আবাসন, সিআইডি ভবন, হাতিশাল খালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, সিআইডি এডিজি আর রাজাশেখরণের সাথেও কথা বলেন গোয়েন্দা প্রধান।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য কলকাতা পুলিশকে শেয়ার করা এবং উনাদের কাজে সহযোগিতা করা। আমরা মনে করি, তাদের সহযোগিতা করতে পেরেছি। আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল আলামত সংগ্রহ করা, সিআইডিকে সহযোগিতা করা, ডিজিটাল এভিডেন্স নিজে চোখে দেখা, কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদার সাথে কথা বলে আমাদের দেশে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বয়ান মিলিয়ে নেওয়া, আসামিরা কোথায় কোথায় গেছে সেগুলো খোঁজখবর নেওয়া- সেক্ষেত্রে আমরা ১০০ ভাগ সফল।’ ডিবি প্রধান জানান, ‘কলকাতা পুলিশের সাথে যে হৃদ্যতা, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে কোন অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে কলকাতাকে স্বর্গীয় আশ্রয় বলে মনে করলে- সেটা আর সম্ভব হবে না। এর ফলে আরও দ্রুততার সহিত কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’

গত ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে শেষবার দেখা গিয়েছিল এমপি আনারকে। মনে করা হচ্ছে, ওই দিনই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আসামিদের মধ্যে অন্যতম হলো এমপি আনারের বাল্যবন্ধু শাহীন। ইতোমধ্যেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে শাহীন নেপাল হয়ে দুবাই, তারপরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছে। তাদের উভয়কে ফিরে পেতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডিবি হারুন।

গত ১২ মে ভারতে এসে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার কাছে বরানগরে দীর্ঘদিনের পরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। আর পরদিন ১৩ তারিখ চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন বলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গোপাল বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে নিউ টাউন থানার পুলিশ ও সিআইডির কর্মকর্তারা। আপাতত পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে এই গোপাল বিশ্বাস। সেই গোপাল বিশ্বাসের সাথেও কথা বলেছেন ডিবির গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ