ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

স্পষ্ট হচ্ছে রেমালের ক্ষত

প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৪, ০৭:১৪ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ০৭:২৬

ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বুক পেতে জনপদকে রক্ষা করা বনের বিভিন্ন স্থানে উপড়ে গেছে গাছপালা। জলোচ্ছ্বাসে টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে পানিতে নিমজ্জিত ছিল সুন্দরবন। এতে বন্য প্রাণী ও বনজীবীদের জন্য করা মিঠা পানির পুকুরে ঢুকে পড়েছে লোনা পানি। মিলছে হরিণের মরদেহ। এছাড়া বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে।

ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। রেমালের তাণ্ডবে মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ ১০ জেলায় অন্তত ২১ জনের প্রাণহানীর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ৩, চট্টগ্রামে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত পর্যন্ত ১২ জন নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল।

বিস্তারিত প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে—

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রাজধানী ঢাকাতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এ বৃষ্টির মধ্যেই টিনের বেড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে স্পর্শ, বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— মরিয়ম বেগম (৪৫), লিজা আক্তার (১৫), মো. রাকিব (২৫) ও আলামিন (২২)। সোমবার (২৭ মে) রাতে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডায় ও যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের আলাদা চারটি ঘটনায় তারা প্রাণ হারান।

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে রাজধানীতে তিন জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ঘটনা তিনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে। এদিকে উত্তর বাড্ডায় কাজ করে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আলামিনের মৃত্যু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। বিষয়টি রাতেই বাড্ডা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছিল।

সাতক্ষীরা: গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৬টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদে ভেসে আসা তিনটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় ১৭টি হরিণকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে আবার বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার ও অনুসন্ধান তৎপরতা চলছে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘এখনো আমরা সব জায়গায় যেতে পারছি না। সাগর ও নদী উত্তাল। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ঘণ্টা জলোচ্ছ্বাস ছিল।

ফলে অনেক বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার খবর শুনতে পাচ্ছি। আরও বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়ার পর আমরা জানাতে পারব।’ নূরুল কবির আরও বলেন, কটকার পুকুরটি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বন বিভাগের বিভিন্ন কার্যালয়ের জানালার গ্লাস, সোলার প্যানেল, পানির ট্যাংক ঝড়ে উড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেটি, পুকুরসহ অন্যান্য স্থাপনা।

সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় উপড়ে পড়া গাছপালার মধ্য থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা একটি হরিণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘হরিণটি বড় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও আরও কত হরিণ ও বন্য প্রাণী জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে, তার কোনো হিসাব কখনো পাওয়া যাবে না।’ এদিকে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরে তাফালবাড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ভেসে আসা তিনটি হরিণের মরদেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের তিনটি মৃত হরিণ বলেশ্বর নদে ভেসে তাফালবাড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় এসেছে।

পরে জ্ঞানপাড়া বন বিভাগের সদস্যরা হরিণ তিনটি উদ্ধার করে মাটিচাপা দেয়। পাথরঘাটা টাইগার টিমের বাঘবন্ধু ইমাম হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে সুন্দরবনে অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস টানা ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী থাকায় হরিণসহ বন্য প্রাণী ভেসে যায়। তাঁদের ধারণা, অস্বাভাবিক জোয়ারে হরিণ তিনি মারা গিয়ে এখানে ভেসে এসেছে।

বরিশাল : বরিশালে রেমালের তাণ্ডবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নগরের রূপাতলী এলাকায় সোমবার ভোর ৪টার দিকে একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। তাছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলার চর দাড়িয়ালের বাসিন্দা জালাল সিকদার (৫৫) গাছের ডাল পড়ে মারা গেছেন।

ভোলা : ভোলার তিন উপজেলায় শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম উমেদপুরে ঘর চাপা পড়ে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান পৌরসভার মনির হোসেনের চার বছরের মেয়ে মাইশা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাজড়া ইউনিয়নে গাছের ডাল পড়ে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) মারা গেছেন। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ঝড়ে গাছচাপায় রেজিয়া বেগম (৭২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) রাতে উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মহিষতুলি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের তাহের উদ্দিন মুন্সির স্ত্রী।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরের পর কলাপাড়ায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। তাছাড়া বাউফলে ঝোড়ো হাওয়ায় একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আব্দুল করিম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার রাতে ঝড়ের সময় বৃদ্ধ করিম পরিত্যক্ত ওই ঘরে আশ্রয় নেন এবং রাতের যে কোনো সময় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘর ভেঙে এ ঘটনা ঘটে। বাউফল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের কাছে এ ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধ করিমের বাড়ি বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। তিনি ভিক্ষা করতেন। বাউফল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন নিশ্চিত করেছেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর শাকতলা এলাকায় নূর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্কুলছাত্র সাইফুল ইসলাম সাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে শাকতলা এলাকার অলী আহমেদের ছেলে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা : খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাতে উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লালচাঁদ মোড়ল গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হূদয় (২৬) নামের এক যুবক মারা গেছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ধসে পড়া দেয়ালে চাপা পড়েন। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কুষ্টিয়া : ঘূর্ণিঝড় রেমালে কুষ্টিয়ার মিরপুরে টিনের চালার নিচে পড়ে বাদশা মল্লিক (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাদশা মল্লিক চিথলিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়া এলাকায় মৃত খবির মল্লিকের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বাবলু।

বরগুনা : বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ঘরের উপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের মৃত খুতি বয়াতির ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা: খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ৩ হাজার ৬০০ পুকুর ও ৯ হাজার ১১৫ ঘেরের মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও পোনা। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও রূপসা উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডব জেলায় এসব উপজেলার ৩৫৫ দশমিক ৩০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬০০টি পুকুর ও ১০ হাজার ২২৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৫৬টি কাঁকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঝড়ে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৭৮ টন মাছ, ১১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫৬৪ টন চিংড়ি, ২০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩৬ টন পোনা, ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০২ দশমিক ২০ টন কাঁকড়া/কুচিয়া, ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭০ টন পিএল (গলদা চিংড়ির খাদ্য বিশেষ), ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি নৌকা, ট্রলার, জলযান ও ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, প্রকৃত অর্থে কত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাদা মাছ, চিংড়ি, পোনা, কাঁকড়া ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ ও রাস্তাঘাট। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। প্লাবিত হয়েছে সবজি ও আমন ক্ষেত। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ।

তিনি জানান, রেমালের প্রভাবে মৎস্য খাতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট ১৪ হাজার ১৫০টি পুকুর, ৭৭৮টি মাছের ঘের ও ১২০টি কাঁকড়া ও কুচিয়ার খামার তলিয়ে গেছে। এতে ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালী ও কলাপাড়া ডিভিশনের ২৩ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে; যার পরিমাণ ১৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫৮ হাজার ৩০৪ কৃষকের ৭৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঝড়ে ছয় হাজার ৮২টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৩১ হাজার ৬৯৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি মিলে মোট ২৯ হাজার ২৪০টি গবাদি পশুপাখি মারা গেছে; যার ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ঝড়ে ৩৬১ হেক্টর গাছ-পালা ও বনাঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ সাত কোটি ২৭ লাখ টাকা। গভীর নলকূপ এক হাজার ২২৪টি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ছয় হাজার ৬৮১টির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে মোট ৮৪ হাজার ৫০০ পরিবারের তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।

চরফ্যাশন (ভোলা) : ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার সকাল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রবল বেগে বাতাস ও বর্ষণ চলে। এতে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। উপজেলার মূল ভূখণ্ড ছাড়া চরমানিকা, ঢালচর, চরনিজাম, চরকুকরি, মুজিবনগর ইউনিয়নে নদ-নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি। তবে ধারণ করা হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পুরো চরফ্যাশন উপজেলা বিদ্যুৎহীন। এই উপজেলার জনগণ কখন বিদ্যুতের দেখা পাবে তা এখনো নিশ্চিত না। গ্রামীণ জনপদের চলাচল রাস্তায় গাছপড়ে থাকায় বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

নয়াশতাব্দী/ডেস্ক

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ