ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভাঙা হবে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটের কমোড-স্যুয়ারেজ লাইন

প্রকাশনার সময়: ২৮ মে ২০২৪, ১৯:৫০

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম। এ সময় সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয় কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদারকে (২৪)। অনলাইনে বসিয়ে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সঙ্গে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলেও মেলেনি সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশ।

মঙ্গলবার (২৮ মে) কলকাতা সিআইডিকে আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ করেছেন ঢাকার ডিবির টিম। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও সার্চের অনুরোধ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী কলকাতা সিআইডি চেষ্টা করছে বলেও জানা গেছে।

সোমবার (২৭ মে) দিনভর প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই কলকাতায় দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা নানা জায়গায় ছুটাছুটি করেন। সকাল ১০টার দিকে নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সে যান বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম। এ সময় কলকাতা সিআইডির কর্মকর্তারাও ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে নেওয়া হয় জিহাদকে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। এরপর তদন্তসংশ্লিষ্টরা পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খালের কাছে যান।

হত্যায় জড়িতদের তথ্যমতে, মরদেহের টুকরো ফেলা হয়েছে বাগজোলা খালে। জিহাদের সঙ্গে ক্যাব চালক জুবেরের বর্ণনা মিলিয়ে দেখতে তদন্তকারীরা নিউ টাউন শহরের একাধিক জায়গায় যান। তবে হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পার হলেও মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনারের দেহাংশের সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হয়নি খুনে ব্যবহৃত চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল গত রোববার সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।

মঙ্গলবার দুপুরে হারুন অর রশীদ বলেন, কলকাতার তদন্তকারী সিআইডির কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা আজও সার্চ করছেন। আমরাও কিছু অনুরোধ করেছি। সঞ্জীবা গার্ডেন্সের দিকে কাঠের পুলটার পাশে যে হাতিশালা লেক আছে, সেখানে সার্চ করতে বলেছি। পাশাপাশি সংসদ সদস্য আনার যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেখানেও সার্চ করতে বলেছি। কারণ, ওই বাসায় তিনটা কমোড আছে। সেখানে ফ্ল্যাশ করার পর জমা পানি যেন সুয়ারেজ লাইনে জমে, সেটাও ভাঙতে বলেছি। অর্থাৎ কমোড ও সুয়ারেজ লাইন ভাঙতে বলা হয়েছে। সঙ্গে লেকও সার্চ করতে বলেছি। আশা করছি, সেটা তারা আজকেই করবেন। সিআইডি সংসদ সদস্য আনারের মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার বা খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছেন। ইতোমধ্যে আজ বর্জ্য যেখানে জমা হয় সেখানে সার্চ চলছে।

হারুন বলেন, এমপি আনার হত্যার গুরুত্বপূর্ণ ঘাতক আমাদের কাছে আছে। সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল সেও আমাদের কাছে আছে। তারা আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যগুলো নিয়ে আমরা কিন্তু কলকাতা এসেছি। আমরা কিন্তু সেখানে সিআইডির সদর দপ্তর সফর করেছি। তাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামি জিহাদকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে মেলা তথ্য দেশে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি, প্রশ্ন করেছি। প্রায় সব তথ্যই মিলে গেছে। আসামি জিহাদকে নিয়ে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি।

হারুন দাবি করে বলেন, আমরা প্রায় সব তথ্যের মিল পেয়েছি। ডিজিটাল এভিডেন্সও আছে। ওই মেয়েটা তো সেখানে ছিল। একটা জীবন্ত মানুষ সেখানে গেছেন। ছবি-সিসিটিভি ফুটেজ তো আছে। সবাই বের হলেন কিন্তু এমপি আনার বের হলেন না। সেটারও তো প্রমাণ আছে। তাছাড়া তারা তো সন্দেহজনক ব্যাগ নিয়েও বের হয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ, তাদের (কলকাতার সিআইডি) তদন্ত, আসামিদের বিগত সময়ের অপরাধের আমলনামা; সবকিছু আমলে নিয়ে তারা তদন্ত করবেন। বের করবেন আনার হত্যার রহস্য। তারপর কোর্টে প্রেরণ করা হলে লজিক্যাল ও বিচারিক স্পিরিট কাজে লাগিয়ে মূল রহস্য বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।

ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিচার খুব কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তিন আসামি বাংলাদেশে, একজন এখানে আছে। চারজনের বক্তব্য, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য পারিপার্শ্বিক তথ্য মিলেছে। ডিজিটাল তথ্য, পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এখনো হতাশ নই। কাজ করছি, আশা করছি তার দেহাংশ উদ্ধার সম্ভব হবে।

সংসদ সদস্য আনার খুনের ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত আরও চারজনের নাম পেয়েছে দুই দেশের পুলিশ। তাদের মধ্যে আক্তারুজ্জামান, সিয়ামসহ চারজন এখনো ধরা পড়েনি। বাকি দুজন হলেন ফয়সাল আলী সাজী ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান ফকির। দুজনই খুলনার ফুলতলার বাসিন্দা। ঢাকা ডিবির হাতে গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত তারা। তারা দুজন বাংলাদেশে আছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ