চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড কে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে এই খুনের সঙ্গে আখতারুজ্জামান শাহীনের জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার। দেশে গ্রেপ্তার হয়েছে তিন খুনিও। তারা খুনের কথা স্বীকার করে লাশ গুমের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু শাহীনের সঙ্গে বা পেছনে আর কারা রয়েছেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।
স্থানীয়দের দাবি, আনারকে হত্যা করার মতো সাহস কখনই শাহীনের হবে না। কারণ আনারের কাছে শাহীন চুনোপুঁটি। পাশাপাশি ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুলের সঙ্গে শাহীনের যোগসূত্র ভাবাচ্ছে স্থানীয়দের। শিমুলের খুলনা ফুলতলা বাড়ি থেকে শাহীনের বাড়ি ১০০ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া শাহীনের অতীতে সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড নেই। এ কারণে শাহীন গ্রেপ্তার না হলে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড কে তা নিয়ে ধূম্রজাল থেকেই যাবে বলে বলে ধারণা স্থানীয়দের। যদিও শাহীনকে গ্রেপ্তার করা অতটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কারণ এরই মধ্যে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন জনকে ৮ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার ১০ দিনের রিমান্ডে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি জেলায় রয়েছে সীমান্তবর্তী বিশাল এলাকা। জেলা দুটি হচ্ছে যশোর ও ঝিনাইদহ। এই দুটি এলাকা দিয়ে সব ধরনের চোরাকারবারি হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ জেলার চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন আনারুল আজিম আনার। এছাড়া যশোরের সীমান্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক এক এমপি। মূলত এই সীমান্ত এলাকায় ঘিরে গড়ে উঠেছিল স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান এবং হন্ডি কারবারের বিশাল এক সাম্রাজ্য। সেখান থেকে নিয়মিত কমিশন পেতেন আনার ও যশোরের সাবেক এমপি। এই সাম্রাজ্যের অংশী ছিলেন ঢাকার মাফিয়ারাও। মূলত ঢাকার মাফিয়াদের মালামালই ওই দুই জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হতো। এদের মধ্যে একজন হীরা ব্যবসায়ী ও একটি আবাসন কোম্পানির মালিক রয়েছে। সমপ্রতি এই দুই সীমান্তে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়। যা ছিল ঢাকার মাফিয়াদের। এ নিয়ে চোরাচালান সাম্রাজ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। চোরাচালান সাম্রাজ্যের একটি অংশের ধারণা, চাহিদা মতো কমিশন না পেয়ে এমপি আনারই এসব মালামাল ধরিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া গত ঈদের আগে এই সিন্ডিকেটের প্রায় ১০০ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আসে আনারের কাছে। যা তিনি আত্মসাৎ করেন। এতে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। সব পক্ষ আনারের বিপক্ষে অবস্থান নেই। চতুর আনার বিষয়টি বুঝতে পেরে সাবধান হন। চলাফেরা শুরু করেন সাবধানতার সঙ্গে। এরই মাঝে শিলিস্তা নামের ওই নারীকে আনারের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়। ওই নারীর সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে ভারতে দুজন দেখা করতে সম্মত হন। বিষয়টি জানান হয় মাফিয়া চক্রকে। এরপর মাফিয়ারা খুন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আখতারুজ্জামান শাহিন কলকাতায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। শিলিস্তা নামের ওই নারীর দায়িত্ব ছিল আনারকে ফ্ল্যাট পর্যন্ত নিয়ে আসা। আনার ফ্ল্যাটে আসার পরই আগে থেকে সেখানে ওৎ পেতে থাকা ভাড়াটে খুনিরা আনারকে জিম্মি করে আত্মসাতের ১০০ কোটি টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বালিশ চাপা দিয়ে আনারকে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ খণ্ড খণ্ড করে হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করা হয়। এরপর তাতে মশলা মাখিয়ে পলিথিন ব্যাগে করে একটি খালসহ বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র মতে, এত বৃহৎ এবং সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করা একা শাহীনের পক্ষে সম্ভব নয়। শাহিনের পিছনে আরও বড় কোনো শক্তি আছে। ওই শক্তির নির্দেশ বাস্তবায়ন করে শাহীন। শাহীনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে এই খুনের শিকড়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক নানা কারণে তিনি খুন হতে পারেন। তাকে হানিট্র্যাপও করা হতে পারে। আমাদের তদন্তে পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ই আসবে। যারা সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল আমরা তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।
স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রমতে, যশোরের চৌগাছা, ঝিনাইদহের মহেশপুর, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত এলাকার চোরাচালানসহ সব কারবারের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল আনারের। সমপ্রতি আনারের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ও সিন্ডিকেটের আগের পাওনা প্রায় ১০০ কোটি টাকার জন্য তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চোরাচালান মাফিয়ারা। এতে সম্মতি দেয় যশোরের সাবেক এমপি (বর্তমান বিদেশে অবস্থান করছেন), ঢাকার একজন হীরা ও একজন ডেভেলপার ব্যবসায়ী। এ নিয়ে ঢাকায় একাধিক বৈঠক হয়। এরপর কিলিং মিশনের দায়িত্ব দেয়া হয় আনারের বাল্যবন্ধু শাহীনকে। কারণ শাহীনের সঙ্গে আনারের ৫০ কোটি টাকা পাওনা নিয়ে বিরোধ ছিল। মিশন সাকসেস হলে শাহীনকে আনারের সাম্রাজ্যের নতুন কাপ্তান করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এছাড়া মিশনের সব খরচ সিন্ডিকেট ব্যয় করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন জন গোয়েন্দাদের কাছে এ বিষয়ে অনেক কিছুই স্বীকার করেছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।
তিন আসামি ৮ দিনের রিমান্ডে: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পর অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলিস্তি রহমান। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলিস্তি রহমানকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়
কলকাতায় ১২ দিনের হেফাজতে সিয়াম: ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় ভারতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে গতকাল আদালতে তোলা হলে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়। ভারতের স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাকে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জজ কোর্টে তোলা হয়েছে। এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিহাদ নিজের নাম সিয়াম বলে জানান। পরবর্তীতে তার আসল পরিচয় জানা যায়।
জানা গেছে, এ ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১ ও ১২০বি ধারায় চারটি মামলা দেয়া হয়েছে। সব ধারাই জামিন অযোগ্য। ৩৬৪ অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ। ৩০২ অপরাধমূলক নরহত্যা। ২০১ তথ্য লোপাট, অর্থাৎ অস্ত্র ও মরদেহ পরিকল্পনা করে সরিয়ে ফেলা এবং ১২০বি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করা (একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে)। পুলিশই এ মামলা করেছে। এ ধরনের মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন।
লাশ ফেলা হয় হাতিশালা বর্জ্য খালে: আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া নামে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া আসামি ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আনোয়ারুল আজিম আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয়। হত্যার পর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে আলাদা করা হয়। এরপর একটি ট্রলি ও তিন-চারটি পলিথিন ব্যাগে ১৪ মে বিকাল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে সে সব টুকরো বের করা হয়। এরপর এগুলো ফেলে দেয়া হয় কলকাতার হাতিশালা বর্জ্য খালে।
এখনো লাশ পায়নি ভারতীয় পুলিশ: আমানের স্বীকারোক্তির পর ভারতীয় পুলিশ ২৩ মে রাতে হাতিশালা বর্জ্য খালে তল্লাশি চালায়। তবে অন্ধকার হওয়ায় সে দিন মরদেহ খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরের দিন ২৪ মে আবারও খণ্ড লাশের সন্ধান শুরু করে ভারতীয় পুলিশ। ডিবির দাবি, যেহেতু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন এবং তথ্য দিয়েছেন সেহেতু লাশের সন্ধান মিলবে।
হত্যার এক মাস আগে ফয়সাল-মোস্তাফিজুরের পাসপোর্ট: গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের দুটি পাসপোর্টই চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হয়। পাসপোর্টে ফয়সালের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে খুলনার ফুলতলা থানার অলকা গ্রাম এবং মোস্তাফিজুরের স্থায়ী ঠিকানা খুলনার ফুলতলার যুগনীপাশা গ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া মোস্তাফিজুর ও ফয়সালকে পাসপোর্ট বানিয়ে দেন। তবে দু’জনেরই বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকার ক-৩২/১২ নদ্দা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এমপি আনারকে কলকাতায় হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েই মোস্তাফিজ ও ফয়সালের পাসপোর্ট করানো হয়। ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করে ১১ মে কলকাতায় প্রবেশ করেন তারা। হত্যাকাণ্ড শেষে ১৭ মে মোস্তাফিজ ও ১৮ মে ফয়সাল দেশে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য গত ১২ মে সংসদ সদস্য আনার বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা ও তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরে ১৩ মে দুপুরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস। ১৩ যে কোনো সময় নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ১৪ মে প্রথম পর্যায়ে এমপির মরদেহের খণ্ডিত অংশ একটি ট্রলিব্যাগে ফ্ল্যাট থেকে বের করা হলেও খুনের বিষয়টি প্রকাশ পায় ২২ মে। যদিও এখনো পর্যন্ত আনারের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
যা বলেন শাহীন: আনার খুনের ঘটনায় আক্তারুজ্জামান শাহীনকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন আক্তারুজ্জামান শাহিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আনার হত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলেন তিনি। ৫ কোটি টাকা দিয়ে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। শাহিন বলেন, এ ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম না। আমার আইনজীবী বলেছে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতে। মানুষ দেশে অনেক কথাই বলে। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক। ফ্ল্যাটের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যদি ফ্ল্যাট ভাড়া নেই। আমি কি আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে, আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কীভাবে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি, কোথা থেকে পেলাম আমি এত টাকা? এখন এগুলো মানুষ বললে আমার কী করার আছে। ঘটনা কবে ঘটেছে সেগুলো আমি পত্রিকায় দেখেছি। সে সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম।
শাহিন বলেন, আমার ড্রাইভার তো কিছু করেনি। আমার গাড়ি, আমার সব কিছু নিয়ে চলে গেছে। এটা কোনো ধরনের বিচার। আমি যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমাকে ধরুক। আমি তো এই দেশে বিচার পাব না। আমি আমেরিকার নাগরিক, এখানে চলে এসেছি। কী করব।
হত্যাকাণ্ডের দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ। এতে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছেন এবং একটি বড় স্যুটকেস নিয়ে লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ওই দুজন স্যুটকেস নিয়ে আবার ফ্ল্যাটে ঢুকছেন। পুলিশের বিবৃতির বরাতে টাইমস নাউ ও এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই স্যুটকেসে পলি প্যাকে ভরা ছিল এমপি আনারের লাশের খণ্ড-বিখণ্ড অংশ। নিহতের হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলা হয়েছিল এবং চামড়াও ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছিল, যাতে পরিচয় নষ্ট করা যায়। তারপর স্যুটকেসে প্যাকেটগুলো ভরে ফ্ল্যাট থেকে বের করে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেন খুনিরা। আর ভিডিও ফুটেজে দেখা দুই ব্যক্তিই এমপি আনারের কন্ট্রাক্ট কিলার। পুলিশ সন্দেহ করছে, আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে একজন নারীর ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে নেয়া হয় এবং তারপর কন্ট্রাক্ট কিলাররা তাকে খুন করে। নিহতের লাশ টুকরা টুকরা করতে জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে মুম্বাই থেকে বিশেষভাবে কলকাতার নিউটাউনে আনা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, জিহাদ বাংলাদেশি। এমপি আনার হত্যার দুই মাস আগে তাকে ভারতে আনা হয়েছিল।
‘আমার বাবার লাশের এক টুকরো মাংস চাই’: এদিকে ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ‘আমার বাবার লাশের এক টুকরো মাংস চাই। যে মাংসের টুকরো ছুঁয়ে দেখতে পারি। সে মাংসের টুকরোকেই বাবা মনে করে জানাজা করাতে চাই।’ কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও হত্যার পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন নিহত এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। মানববন্ধন চলাকালে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাবা হারানোর ব্যথা-কষ্ট বোঝেন। তিনি আমার বাবা হারানোর বেদনা বুঝবেন। তার বাবার হত্যার বিচার করেছেন, আমার বাবা হত্যার বিচারও করবেন। হত্যার পরিকল্পনাকারীকে ধরার পরই খতিয়ে দেখা যাবে আসলে সে এত বড় অপকর্ম কেন ঘটাল। এর বিচার অবশ্যই হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। গতকালও কথা বলেছি। আমরা আইনের আশ্রয় নেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় সর্বোচ্চ অভিভাবকরা আছেন, তারা আমাদের পরামর্শ দেবেন এবং তারা অবশ্যই তাদের দলীয় এমপি হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। কালীগঞ্জের মানুষের সুখে-দুঃখে যিনি সব সময় পাশে থেকেছেন সেই মানুষটির হত্যার বিচার আমরা চাই। আমরা কোনো শৃঙ্খলাহানি করতে চাই না। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। এ সময় নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান মতি, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসেনসহ আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
নয়াশতাব্দী/ জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ