টাকা দিলেই মিলছিল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা। টিকা নিতে আগ্রহী প্রবাসীদের তুলনায় টিকার মজুদ সীমিত থাকায় এক শ্রেণির মানুষ এই সুযোগ নিচ্ছে। আর তাদের ঘিরেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গড়ে উঠছে একটি অসাধু চক্র। এই চক্রটি টাকার বিনিময়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে টিকার মেসেজ। আবার টাকার বিনিময়েই পাইয়ে দিচ্ছে ফাইজার-মডার্নার টিকা! তা-ও আবার এক দিনেই। দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করলেই মিলছিল টিকা।
জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে টিকা পাইয়ে দেয়ার এ ঘটনার পেছনে কাজ করছে হাসপাতালটির কয়েক আনসার সদস্য ও দালালদের একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট সদস্যদের টাকা দিলে টিকার মেসেজ নিচ্ছিলেন অনেকেই।
হাসপাতালের সামনে টিকাপ্রত্যাশী এক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, দুই হাজার টাকা দিয়ে টিকার মেসেজ পেয়েছি। টাকা দেয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মাথায়ই তার ফোনে চলে আসে টিকার এসএমএস। টাকা দিলেই দ্রুত মিলছে টিকা নেয়ার মেসেজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সৌদি প্রবাসী বলেন, একদিকে টিকা পেতে ভোগান্তি আরেক দিকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক টাকা খরচ করে টিকার জন্য শেরপুর থেকে ঢাকায় এসেছি। এক একটা দিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে, সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার আশা ভঙ্গ হচ্ছে। এ নিয়ে আমার পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত। টিকা নিতে এসেও হয়রানির শিকার হচ্ছি। টাকা দেয়ার পরই শুধু টিকার মেসেজ মিলছে।
সরেজমিনে টিকাপ্রত্যাশী সেজে কথা হয় হাসপাতালের সামনে দায়িত্ব পালন করা এক আনসারের সঙ্গে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অপর দুই সদস্য টাকার হিসাব কষছিলেন। টাকার বিনিময়ে হলেও টিকা এবং এসএমএস পাওয়ার প্রস্তাব দিলে প্রথমে কোনোভাবেই ধরা না দিয়ে সরে যান। পরে তিনি জানান, ২ হাজার ৫০০ টাকা দিলে আজই আসবে টিকার মেসেজ।
আনসার হারিস জানান, তিনি এখানে নতুন। টাকার বিনিময়ে টিকা পাইয়ে দেয়ার এ কাজে জড়িত সিনিয়র আনসারদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই কাজের সঙ্গে শুধু আনসাররাই জড়িত নয়। এর পেছনে আছে অনেকেই বলে জানান দালাল চক্রের এক সদস্য।
জানা যায়, সরবরাহজনিত কারণে কিছুদিন ফাইজারের টিকাদান বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে ঢাকার ৭ হাসপাতালে আবার শুরু হয়েছে টিকা কার্যক্রম। দেশে গত সাতই ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়। এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে টিকা নেয়ার জন্য নাম নিবন্ধন করে দীর্ঘ সময় পার হলেও অনেকেই পাচ্ছেন না টিকা গ্রহণের এসএমএস।
জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, টিকা নিয়ে এমন নৈরাজ্যের কারণে ইতোমধ্যেই ১৫ আনসারকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কিছু দিন চুপচাপ ছিল এই চক্রটি। এদিকে, দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও প্রত্যাশিত টিকা না পাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন টিকাপ্রত্যাশীরা। সকালে ফাইজারের টিকাদান শুরু হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা পাচ্ছেন না অনেকেই। ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, পরিচালকের গোঁয়ার্তুমি সিদ্ধান্তের কারণেই আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ