ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬

দেশজুড়ে ডেঙ্গু ‘ডর’

প্রকাশনার সময়: ২০ মে ২০২৪, ১১:২৮

পিরোজপুরের বাসিন্দা ইমন। থাকেন রাজধানীর কমলাপুরে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। জ্বরের তীব্রতায় জড়িয়ে আছেন শীতের পোশাক। একই হাসপাতালে গত কয়েক দিন ধরে মুগদার নাজমাও ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়ছেন। শুধু এই দুজনই নয়। রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালের তথ্য মতে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে রাজধানীবাসীর মধ্যে।

জানা গেছে, চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৮ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি পুরুষ। আর মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫৬ শতাংশের বেশি নারী। এই মৃত্যুহার গত বছরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট দুই হাজার ৫৪৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ৮৫১ জন। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে গত ১৪ মে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২১ জনের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ১১ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশালে, পাঁচজন। ডেঙ্গু আক্রান্তের এমন লক্ষণে চলতি বছর দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান, এই দায় রোগীদের ওপরই চাপিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো ডেঙ্গু মোকাবিলায় হয়নি তেমন কোনো গবেষণা।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক নিয়াতুজ্জামান বলেন, এ বছর প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছেন। ডেঙ্গু ওয়ার্ড কখনোই শূন্য হয়নি। সার্বক্ষণিক হাসপাতালে রোগীদের প্লাজমা ও প্লাটিলেট দেয়া এবং সিবিসি টেস্টের ব্যবস্থা আছে। তবে কিছু রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরেও, তা না বাঝার কারণে দেরিতে হাসপাতালে আসছে। এ কারণে অনিবার্য মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের ২৪ বছরের ডেঙ্গুর ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে গত বছর। ২০২৩ সালের পুরোটা জুড়েই দেশবাসীকে ভুগিয়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৮৬৮ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয় ১৯৬০ সালের দিকে। তারপর ২০০০ সালের জুন মাসে ডেঙ্গু সর্বপ্রথম মহামারি আকারে দেখা দেয় বাংলাদেশে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পরে কয়েক বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কম থাকলেও গত ৫ বছর ধরে ভোগাচ্ছে ডেঙ্গু। ২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক এমআইএস ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জেনিটিক্যালি পুরুষের তুলনায় নারীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে। এটি নারীদের মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া পুরুষের তুলনায় নারীরা দেরিতে হাসপাতালে আসেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক পদ্ধতি ছেড়ে ভেক্টর ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আসা না গেলে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাবে। ফলে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা এখন সময়ের দাবি। তারা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। এ জন্য বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

গবেষণা প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গবেষণা বলতে যেটি বুঝায়, তা হয় না। প্রতিটি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য যাতে সিস্টেমে থাকে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহের জন্য পাইলটিং শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এক সময়ের ঢাকাকেন্দ্রিক ডেঙ্গু এখন ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। তবে সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও নানা মহলে সমালোচনা রয়েছে।

জুলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (জিসিএদ) চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই বলে ডেঙ্গু দমন টেকনিক্যাল ইস্যু, কিন্তু এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে সুশাসনের অভাব। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুড গভর্নেন্স জরুরি।’ তিনি বলেন, কীটতত্ত্ববিদরা বারবার ভেক্টর ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মশা দমন করতে বললেও সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার তা প্রয়োগ করেনি।

ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মাঝে মধ্যে যে ডেঙ্গু রোগী কমে সেটি ন্যাচারালিই। সিটি করপোরেশন দুর্নীতিমুক্ত না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে না। তারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে আসে কিন্তু তাদের সেই পদ্ধতি এপ্লাই করে না। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত এক জরিপে উঠে আসে, ২০২২ সালের বর্ষা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় ঢাকার ভবনগুলোতে লার্ভার উপস্থিতি প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু এখন সারা বছরের সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সারা বছর ধরে নিয়মিত কর্মসূচি নিতে হবে সব দপ্তরকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ কার্যক্রমের সঙ্গে ছিলেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হলে বছরের শুরু থেকেই পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে হবে। এডিসের ঘনত্ব বেড়ে গেলে তখন ব্যবস্থা নিলে খুব বেশি কার্যকর হয় না।’ তিনি বলেন, শীতের সময়ও ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। এখনই সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ না করলে ২০২৪ সালে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জানুয়ারি থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এখন কিউলেক্স মশা নিধনে কাজ হচ্ছে। বছরব্যাপী মশা নিধনে কাজ করতে আমরা একটি পরিকল্পনা করেছি।

অতীতে ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি: বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয় ১৯৬০ সালের দিকে। এরপর কেটে গেছে চার দশক। তারপর ২০০০ সালের জুন মাসে ডেঙ্গু সর্বপ্রথম মহামারি আকারে দেখা দেয় বাংলাদেশে। সে বছর মোট ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যার মাঝে মারা যায় ৯৩ জন। এরপর কম-বেশি প্রতিবছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে। কিন্তু সেই সংখ্যা কখনোই ২০২৩ সালের মতো এত প্রকট আকার ধারণ করেনি। এই সময়ের মাঝে ২০২৩ সালের আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল কোভিডের আগের বছর ২০১৯ সালে। ওই বছর সারা দেশে মোট ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ১৬৪ জন। ২০১৯ এর সঙ্গে এ বছরকে তুলনা করলে দেখা যায়, এ সময়ের মাঝে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ। সে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়ে হয়েছে তিনগুণ।

ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ: একটা সময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকালই হলো ডেঙ্গুর মওসুম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সেই বিশ্বাস পাল্টানোর সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা না, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা পরবর্তী সময় অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ বলা হয়। কিন্তু গত বছর অক্টোবরের পর সংখ্যার বিচারে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত বছর ডিসেম্বরেও প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে মারা গেছে। বিগত পাঁচ বছরের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২২, এই সময়ের মাঝে শুধু ডিসেম্বর মাসে মোট মারা গেছে ৩৪ জন। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বর মাসের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৬ জন, যা আগের ৫ বছরের ডিসেম্বর মাসের মোট মৃত্যুর চেয়ে দুই গুণ বেশি।

ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নয়: সাধারণত ঢাকা সব সময় ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকলেও এবার গ্রামাঞ্চলেও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছর ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু পাওয়ার কারণ হলো গ্রামের ‘সেমি-আরবান কন্ডিশন’। অর্থাৎ আগে নগরায়ণের ছোঁয়া শুধু শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু বিগত এক দশকে ঢাকার বাইরের অবকাঠামোগত চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ড. মুশতাক বলেন, ‘যত নগরায়ণ বাড়ছে, তত অপরিচ্ছন্নতা বাড়ছে। এ কারণে যেখানে-সেখানে পরিষ্কার পানি জমে থাকছে, যা এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র। অথচ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রধান শর্তই হলো পরিচ্ছন্নতা।’

ডেঙ্গু কি আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না?

বলা হয়, কোনো ভূখণ্ডে যদি একবার ডেঙ্গু দেখা দেয়, তবে সেটিকে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করার উপায় নেই; বড়জোর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর, নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। এই দুই সমস্যা মেটানোয় সরকার যদি যথাযথ ব্যবস্থা এখন থেকেই গ্রহণ না করে, তাহলে চলতি বছর ২০২৪ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেন আইইডিসিআরের ড. মুশতাক।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলপত্র: দীর্ঘ দুই দশক পর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাত বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ‘জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র’-এর খসড়ায় (২০২৪-২০৩০) বলা হয়েছে, এই ৭ বছরের মাঝে প্রতি লাখে ডেঙ্গু সংক্রমণ ১০০-তে এবং মৃত্যুহার ০.১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে মোট ৬টি কৌশল বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে এই কৌশলপত্রের খসড়ায়। এর মাঝে প্রথমেই রয়েছে জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি। আরও রয়েছে, সমন্বিতভাবে কীটনাশকের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই কৌশলপত্র নিয়ে সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটিকে বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।

কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কৌশলপত্রে মশা নিয়ন্ত্রণের অংশটি খুবই দুর্বল, এটা ঠিকমতো করেনি। এবার উপজেলাগুলোতে প্রচুর ডেঙ্গু হয়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ নেই এতে।’ এ বিষয়ে ড. মুশতাক বলেন, ‘এই কৌশলপত্র স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে করা হয়েছে। কিন্তু এটা বাস্তবায়িত করা কঠিন কাজ। তারা কৌশলপত্র করছে, ভালো কথা। কিন্তু এখানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি কোথায়?’

ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগ পুরুষ কেন: এদিকে দেখা গেছে, এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৬০ শতাংশই পুরুষ। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের নারীদের চেয়ে পুরুষদের শরীরে অনাবৃত অংশ বেশি থাকায় মশা দংশন করার সুযোগ বেশি পায়। তাছাড়া, এখনো বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে কম।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ