বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ‘লু’ হাওয়া বইছে। এই ‘লু’ হাওয়া মানে গরম কোনো বাতাস নয়। সাম্প্রতিক দাবদাহের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ জনজীবনকে যেভাবে দুর্বিষহ করে তুলেছে, রাজনীতির এই ‘লু’ হাওয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ‘লু’ হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তার পুরো নাম ডোনাল্ড লু। তিনি মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আর তার এ সফরকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে বাহাস চলছে। দুই পক্ষেই লু’র এই সফর নিয়ে কমবেশি উত্তাপ-উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।
এই সফর নিয়ে জনগণের মধ্যেও নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক চলছে। হিসাব নিকাশ চলছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে। মার্কিন সরকারের এ প্রতিনিধির সফরকালে বাংলাদেশ কি পাবে, সরকার কতটুকু আদায় করতে পারবে, যুক্তরাষ্ট্র কি দেন-দরবার করবে, অথবা দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় কোন কোন বিষয় উঠে আসবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। মোটকথা সবার অপেক্ষা এখন ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফর এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি।
আওয়ামী লীগ বলছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে ডোনাল্ড লু-এর এই সফর। দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন একাধিক বক্তব্য রাখছেন। গত রোববার আওয়ামী লীগের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লু দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আসছেন। সরকারের সঙ্গে তার কথাবার্তা হবে। এখন বিএনপি মনে করে আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয় কি-না, এ ধরনের উদ্ভট চিন্তাও তাদের থাকতে পারে। তারা তো এমন অনেক উদ্ভট চিন্তা করে প্রলাপ বকেছিল বারবার।’
এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সোমবার জানিয়েছেন, ডোনাল্ড লু’র এই সফরে আলোচনায় উঠে আসবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির বিষয়টি। একই দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লু-এর সফর সম্পর্কে বলেছেন, ‘কে এলো তাতে আমাদের ইন্টারেস্ট নাই।’
অন্যদিকে সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লু’র আসা-না আসায় আমাদের কিছু আসে যায় না।’
তবে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বিএনপি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে খুব উৎসাহ না দেখালেও ডোনাল্ড লু-এর দর্শন পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। তাহলে লু’র বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিএনপি প্রকাশ্যে উদাসীন ভাব দেখাচ্ছে কেন, জানতে চাইলে সূত্রটি বলছে, এটি বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশল।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, এই সফর যতটা না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি কূটনৈতিক। দেশটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভাষ্য এই সফরে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে জলুবায়ু সংকট ও দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টি। আর এ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইবেন ডোনাল্ড লু।
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ