ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেউ কথা রাখেননি!

প্রকাশনার সময়: ১২ মে ২০২৪, ০৭:৪৭

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দুই মেয়র যথাক্রমে মো. আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পার হলো দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর। ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৩ মে এবং দক্ষিণের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তিন দিন পরে ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনি ইশতেহারে এ মেয়র জুটির নগরবাসীর কাছে তাদের দেয়া অঙ্গীকার যেন কাগুজে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এসব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই সম্পূর্ণরূপে তারা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হননি বলে মনে করছেন নগর বিশ্লেষকরা। তাদের মতে দুই মেয়রের কেউ-ই কথা রাখেননি।

জানা গেছে, নির্বাচনি ইশতেহারে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত ও আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অপরদিকে দক্ষিণের মেয়র তাপস নির্বাচনি ইশতেহারে প্রায় ৫০টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী, সুন্দর, প্রাণবন্ত সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু চার বছরের ব্যবধানে এখন পর্যন্ত দুই মেয়র তাদের অঙ্গীকারের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছেন। উভয় মেয়রই ঢাকার ভয়ানক যানজটের উন্নতি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং মশার উপদ্রব নির্মূলসহ সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে সক্ষম হননি।

মেয়র দ্বয়ের প্রতিশ্রুতি

ঢাকার দুই নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচিত দুই নগরপিতা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও মো. আতিকুল ইসলাম।

এর মধ্যে ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক চাহিদা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস। অন্যদিকে, আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন উত্তরের নগরপিতা আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণকে একটি আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন সরকারদলীয় এ দুই মেয়র।

আতিকুলের প্রতিশ্রুতি: নগরবাসীর জন্য সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তার নির্বাচনি ইশতেহারে ৩৮টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছিলেন। এসব প্রতিশ্রুতিতে সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলায় প্রাধান্য দেন। মাদকমুক্ত ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে অবশ্যই ঢাকাকে জলজট, যানজট, মাদকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

তাপসের প্রতিশ্রুতি: ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তার নির্বাচনি ইশতেহারে উন্নত ঢাকা গড়তে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করে উন্নত ঢাকা গড়ে তোলাসহ ৫০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাস্তাঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন, পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা ছাড়াও তিনি নির্বাচনি ইশতেহারে ‘ঐতিহ্যের, সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা’ গড়ার বিষয় প্রাধান্য পায়।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুলের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকারে বোর্ডের সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল; রাস্তা পারাপারের জন্য পুশ বোতাম সংকেত ইনস্টল করা; স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ডেডিকেটেড পরিবহন চালু করা; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য সরকারি সুবিধা এবং তাদের জন্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা; পার্কিং লট স্থাপন এবং বৈদ্যুতিক বাস চালু করা— যার সবই এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আবার ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার তাপস দ্রুত চলমান যানবাহন, ধীরগতির যানবাহন এবং হেঁটে চলা মানুষের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরির পাশাপাশি রাস্তা পারাপারের উন্নতির জন্য গণপরিবহন আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— যা অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে।

তবে উভয় সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত বিআরটিএর সহযোগিতায় বাস রুট যৌক্তিককরণ পরিষেবা চালু করেছে, তাও শুধু কয়েকটি রুটে। তাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রুটে পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা নগর পরিবহন, যে নামে বাস রুট রেশনালাইজেশন চলছে, একই কোম্পানির বাসগুলো সিটি করপোরেশন বা কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেই যানজট কমানো সম্ভব হবে। মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর আদিল মুহম্মদ খান বলেন, যে ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস যে কোনো শহরের যানজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, ‘রাজধানীর অসহনীয় যানজটের অন্যতম কারণ হল প্রাইভেট কার। গণপরিবহনের মান উন্নত না হলে ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহম্মদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি আগামী দু-এক বছরের মধ্যে ঢাকা নগর পরিবহনের অধীনে প্রায় ৪০০০-৫০০০ বাস চালু করতে পারে, তাহলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়রের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি নগরীর খালগুলো ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে উভয় পক্ষই এখনো খালের জল প্রবাহের তেমন উন্নতি করতে পারেনি। অর্জন করতে পারেনি সব জলাশয়ের নিয়ন্ত্রণ। যার ফলস্বরূপ সামান্য বৃষ্টিতেও নগরীতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতার। যদিও ডিএসসিসি মেয়র তাপসের দাবি আসন্ন বর্ষাকালে নগরবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে, যা তার মতে পূর্বে এক ঘণ্টা সময় লাগত। অন্যদিকে বিগত বছরের তুলনায় নগরীতে জলাবদ্ধতা কমেছে বলে দাবি করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল। ২০২০ সাল থেকে জলাবদ্ধতার হটস্পটগুলো ১৪২ থেকে ৪২-এ নেমে এসেছে দাবি করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকা উত্তরের জলাবদ্ধতা দ্রুত মোকাবিলায় ১০টি এলাকার জন্য ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকার খাল-নদী উদ্ধারে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে তেমন কোনো লাভ হবে বলে আমি মনে করি না। এছাড়া এমন সনাতনী পদ্ধতীতে খাল উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকাকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

রয়েছে মশার আতঙ্ক: দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় হয় ১১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মশা নিধনে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সামান্য কমে দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পরের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে দক্ষিণ সিটিতে বরাদ্দ হয় ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মশক নিধন খাতে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ২ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশা নিধনে ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটির বাজেট ছিল ১৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উত্তর সিটিতে মশক নিধন খাতে বরাদ্দ ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উত্তর সিটিতে মশক নিধনে বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উত্তর সিটি করপোরেশন করেছে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ, উত্তর সিটিতে মশক নিয়ন্ত্রণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ হয়েছে ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও ভয়াবহ হতে পারে। কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, চলতি বছরেও আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা ভাল খবর নয়। তিনি বলেন, প্রাণঘাতী ডেঙ্গুজ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূলে সিটি করপোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাস ট্র্যাকিং করা এবং রোগীদের অবস্থান অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সতর্ক করে দিয়ে এ কীটতত্ত্ববিদ বলেন, এডিস মশা দ্বারা সৃষ্ট আরেকটি মারাত্মক রোগ চিকুনগুনিয়াও এ বছর হতে পারে। আর এজন্য আগে থেকেই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয় বলেও অভিযোগ তার। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উত্তরাঞ্চলে একটি দ্রুত অ্যাকশন টিম কাজ করছে। অপরদিকে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর বাসা ও আশপাশের ৪০০ গজের মধ্যে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক দাবি করে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে— এ জাতীয় সতর্কবার্তা পূর্বেও ছিল, তথাপি রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক। সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। আর যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থিতি বিবেচনায় যে অপ্রতুল কিংবা লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা-ও না বললেই চলে। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার যে সম্ভাবনা ছিল, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি বাস্তবে কতটুকু ছিল, তা প্রশ্নবিদ্ধ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: ঢাকার দুই মেয়রই রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়নে তাদের মেয়াদের চার বছরের মধ্যেও ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বেশ কয়েকটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপন করা হয়েছে। এসটিএস জোনের বাইরেও বর্জ্য ডাম্পিং হয় এবং প্রায়শই খোলা থাকে। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি প্রায় সব ওয়ার্ডেই এসটিএস স্থাপন করেছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, উত্তর সিটির অধীনে সব ওয়ার্ডে এসটিএস রয়েছে এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলছে। শিগগিরই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নতি দৃশ্যমান হবে বলে তিনি আশাবাদী।

বায়ু এবং শব্দ দূষণ হ্রাস: গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় থাকলেও সিটি করপোরেশনের কোনোটিই বায়ু বা শব্দদূষণ কমানোর জন্য তেমন কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল জানান, বায়ুদূষণ কমাতে ইলেকট্রিক বাস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। একই লক্ষ্যে পানি স্প্রে করতে দুটি ‘হাই-টেক’ সজ্জিত স্প্রে কামান ব্যবহার করা হয়। আবার ডিএসসিসি মেয়র শেখ তাপস বলেন, বায়ুদূষণে পরিবহনে ব্যবহূত জ্বালানি ৮০ ভাগ দায়ী, ইটভাটা ১০ ভাগ এবং বাকি ১০ ভাগ কারখানা ও অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে হচ্ছে। তাছাড়া যানজটই শব্দ দূষণের প্রধান কারণ এবং এটির উন্নয়নে কাজ চলছে।

রাজধানীর অন্যান্য সমস্যা: রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করার নিয়ম থাকলেও একাধিক সংস্থার দ্বারা এলোমেলো ও সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি রাজধানীজুড়ে সাধারণ এবং নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণের মেয়র শেখ তাপস বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া বর্ষায় কোনো খনন করা যাবে না। রাস্তার ধারে দোকানপাট ও হকারদের ব্যবসার কারণে রাজধানীজুড়ে ফুটপাতের জায়গা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও চলমান উন্নয়ন কাজের কারণে ফুটপাত বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও গত চার বছরে মেয়রদের কেউই হকারদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নিশ্চিত করতে পারেননি বা ফুটপাত থেকে সরাতে পারেননি। এদিকে, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এখনো তাদের আশপাশে মারাত্মক রাসায়নিক স্টোরেজ নিয়ে বসবাস করছেন। নিমতলী ও চকবাজারের মর্মান্তিক ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বা গুদাম স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডসহ ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।

বিআইপি সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহর একটি অপরিকল্পিত শহর। সিটি কপোরেশনের সব সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং শুধু মেয়রদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে শহরের অনেক সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, নগরীর সমস্যাগুলো সমাধানের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ