ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

প্রকাশনার সময়: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৪

দেশজুড়ে বইছে আগুনে রৌদ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আজ পর্যন্ত বলবৎ আছে ‘হিট অ্যালার্ট’। কখন যে বৃষ্টি হবে-এমন হাপিত্যেশ আজ দেশজুড়েই বলা যায়। কারণ আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। গত বছর একটানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল।

এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। গতকাল শুক্রবার ২৬ এপ্রিলও তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখানেই শেষ না আবহাওয়া অফিস বলছে, চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আর কিছু দিন।

এপ্রিলের শুরু থেকেই টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। যত দিন গেছে তাপপ্রবাহ ততই তীব্র হচ্ছে। টানা এমন দীর্ঘদিনের তাপপ্রবাহ আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দেশের গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপপ্রবাহ। যা এপ্রিল মাসের দীর্ঘ ব্যাপ্তিকাল বলছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

গতকাল শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে এক বছরে তাপপ্রবাহের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বইছে বাংলাদেশে।

টানা অন্তত দুদিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। চলতি এপ্রিলে ২৪ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার এপ্রিল বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশ। যা দেশের সর্বোচ্চ।

এর আগে বুধবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। মঙ্গলবার ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ।

সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৯ শতাংশ। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৯ শতাংশ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩২ শতাংশ।

তার আগের সপ্তাহে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৭ শতাংশ। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৭ শতাংশ।

এদিকে তাপপ্রবাহের পর একটু একটু করে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামী মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি হতে পারে দেশজুড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছরই এপ্রিল মাস অনেক উষ্ণ থাকে তবে ৩০ বছরের মধ্যে এবারের এপ্রিল উষ্ণতম। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই এপ্রিলে ঢাকার তাপমাত্রা গত ৩০ বছরে চেয়ে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের উপাত্ত আছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো। আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমন প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। এবারের অতি তাপের কারণে এবার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প জমা হচ্ছে। আর তাতে চলতি বছর অতিবৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার যে মূল বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে, সেটা হলো অনিশ্চয়তা। প্রকৃতি কখন কীভাবে আচরণ করবে, তার ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে। এবার এত গরম হয়তো পরে দেখা যাবে, গরম একদম কমে গেছে। এই বিরূপ প্রকৃতিকে মোকাবিলা করাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দীর্ঘদিন ধরে তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল।’ এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভান্ডারে থাকা ১৯৮১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের এপ্রিলে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি ২০ দিন মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। কোনো একক মাসে এর আগে এত দিন ধরে তাপপ্রবাহ হয়নি। গত ৪৩ বছরের মধ্যে দেখা গেছে, যশোরে তাপপ্রবাহের দিন সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা।

১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা একটানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো।

চার কারণে এত তাপ

আবহাওয়াবিদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপ বলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, চৈত্র মাসের শেষ থেকে দেশে গরম বাড়ে। বৈশাখজুড়েই এর প্রভাব থাকে। আসলে এবার বা সামপ্রতিক সময়ে যে প্রচণ্ড তাপ, এর কারণ তো বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। এই যে তাপ, এটা উপমহাদেশজুড়েই বিস্তৃত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে একটি অতিমাত্রার তাপবলয় তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয় পশ্চিমবঙ্গসহ ভারত ও পাকিস্তানেও এবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবারের প্রচণ্ড গরমের একটি কারণ। পাহাড় বা পর্বতে বাধা পেয়ে বায়ু ওপরের দিকে উঠতে থাকলে তা তাপ কমিয়ে শীতল হতে থাকে। এর ফলে কোনো এক উচ্চতায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। আর এই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ জন্য পর্বতের প্রতিবাত অঞ্চল বা উইন্ড অত্যধিক বৃষ্টি হয়। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমঘাট পর্বত; বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের আরাকান পর্বতে এ ধরনের বৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ের গায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এ বৃষ্টি বেশি হয়। কিন্তু এবার এর পরিমাণ একেবারেই কম। তাই গরমও অনেক বেশি।

এল নিনো মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি বায়ুপ্রবাহের একটি। এল নিনো বলতে মূলত উষ্ণায়নের অবস্থা বোঝায়। অন্যদিকে লা নিনা বোঝায় এর উল্টো অবস্থাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এল নিনোর সক্রিয়তার কথা জানায়। এর কারণে যে এবার বিশ্বজুড়েই তাপপ্রবাহ বাড়েবে, তা আগে থেকেই সতর্ক করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অব মেটেরলজি এল নিনোর তথ্য জানায়। ১৬ এপ্রিল তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এল নিনো শেষ হয়েছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, এল নিনো পরিস্থিতি শেষ ঘোষিত হলেও এর রেশ রয়ে গেছে। তাই এবার এত তাপপ্রবাহ বেড়েছে।

এ বছর এপ্রিল মাসে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি বড় কালবৈশাখী হয়েছে। গত বছরও এর সংখ্যা ছিল সাতটি। বজ্রমেঘ সৃষ্টি হয়ে কালবৈশাখী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া তৈরি করে। এর জন্য ভারতের বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হওয়া স্কোয়েল বা ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এবার এর লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

আগামী দিনের শঙ্কা : অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দপ্তর এল নিনোর সমাপ্তির কথা ঘোষণার পাশাপাশি লা নিনার আগমনের কথা জানিয়েছে। অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বক্তব্য, লা নিনার সক্রিয় হয়ে ওঠার অর্থ হলো, এবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে। কারণ, সমুদ্র তো বটেই, ভূপৃষ্ঠেও জমা হয়ে আছে এখন তৈরি হওয়া অতিরিক্ত তাপ।

এতে প্রচুর জলীয় বাষ্প তৈরি হবে আর বৃষ্টি ঝরবে বেশি। ১৫ এপ্রিল ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বলা হয়েছে, এবার ভারতের তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বড় অংশে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এবার এসব অঞ্চলে দীর্ঘদিনের স্বাভাবিক বৃষ্টির চেয়ে ১০৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলছিলেন, ‘এখন যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তা স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো মেঘের মাধ্যমে বৃষ্টি হলে কমবে না। বড় ধরনের বজ্রঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় তাপপ্রবাহের অঞ্চল ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, খুলনা ও রাজশাহীর গরম বজ্রঝড়েই কমা সম্ভব।’

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙলো চুয়াডাঙ্গা। গতকাল শুক্রবার বিকালে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলা ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। এর আগে বৃহস্পতিবার জেলায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আজ (গতকাল) বিকালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অসহ্য গরম অনুভূত হওয়ার কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি। এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েক দিন। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ঈশ্বরদী। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই রোদ আর গরমে। রোদের তাপ এতই প্রখর যে বাইরে টেকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। গরম থেকে রক্ষা পেতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। প্রখর রোদে পথ-ঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। প্রচণ্ড রোদ ও গরমের ভিতরে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে আখক্ষেতে নিড়ানি দেয়ার কাজ করছেন শ্রমিক জামাল আলি এবং তসলেম আলী। তারা বলেন, রোদ গরমে খুব কষ্ট হলেও বসে থাকলে পেটে ভাত জুটবে না।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রবাহে লালমনিরহাটে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, জনশূন্য রাস্তাঘাট। বিশেষ করে হতদরিদ্র-খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আগুন ঝরা বাতাসে নারী-শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে (লালমনিরহাট-পাটগ্রাম) মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কম, জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না।

শুক্রবার দুপুরে আদিতমারী কিসামত চন্দ্রপুর এলাকার মাঠে কাজ করা বয়োবৃদ্ধ কৃষক নুর আলম জানান, তীব্র তাপদাহে মাঠে থাকা যাচ্ছে না, রোদ আর গরমে আমাদের নাজেহাল অবস্থা। বাসচালক রমজান আলী জানান, গরমের কারণে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সঙ্গে লেগে যাচ্ছে। এতে খুব সতর্ক অবস্থায় গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে রাসেদুল ইসলাম (৫৪) নামে এক অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চামটাহাট বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাসেদুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের ক্ষুব্ধ বিছনদই এলাকার বদর উদ্দিনের পুত্র।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে অটোরিকশা নিয়ে ভোটমারী গোলাম মর্তুজা ক্লিনিকের মাইকিং করতে করতে চামটার হাটবাজারে যান রাশেদুল। সেখানে একটি হোটেলে খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যান।

কুমিল্লা : কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রচণ্ড দাবদাহে হিটস্ট্রোকে জালাল উদ্দিন (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ১নং বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার চান্দের বাড়িতে। স্থানীয়রা জানান, সকালে জমিতে ধান কাটার জন্য যান কৃষক জালাল উদ্দিন। পরে তিনি অসুস্থ অনুভব করায় বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে এসে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ