ভোরের আলো ফুটতেই বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হল নতুন বর্ষ ১৪৩১। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি- বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহ্বান জানিয়ে রোববার (১৪ এপ্রিল) নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালী; উদযাপন করছে বাংলা বছরের প্রথম দিন 'পহেলা বৈশাখ'।
বর্ণিল এ উৎসবে মেতেছে দেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোক উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। দিনটি ঘিরে রাজধানী এবং দেশজুড়ে রয়েছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী র্যালি আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। সব সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বাংলা নববর্ষের ওপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেল রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে।
মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়।
মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
নয়াশতাব্দী/ডিএমন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ