ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নিরাপত্তার চাদরে রাজধানী

প্রকাশনার সময়: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৮

ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় র‍্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। নিয়মিত চেকপোস্টের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে সব এলাকায়। এছাড়া চুরি ও ছিনতাই ঠেকাতেও নেয়া হয়েছে গোপন পরিকল্পনা। তার অংশ হিসেবে পাড়ামহল্লাকেন্দ্রিক থাকবে বিশেষ নজরদারি।

একই সঙ্গে জাতীয় ঈদ মাঠের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ঈদের ছুটিতে গ্রামমুখী মানুষের বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে ডিএমপির ৮টি ক্রাইম জোন ও ডিবি পুলিশকে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ জন্য বিভিন্ন এলাকায় সোসাইটি ও অ্যাপার্টমেন্টের কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলেছেন থানা পুলিশ সদস্যরা। অপরিচিত ব্যক্তিদের কলোনি ও অ্যাপার্টমেন্ট প্রবেশে নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগা মাঠে ঈদের প্রথম নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৩৫ হাজার মুসল্লি একত্রে অংশ নিতে পারবেন। এবারই প্রথম জাতীয় ঈদগা মাঠের চারদিকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকায় বসানো হয়েছে শত শত গোপন অত্যাধুনিক মুভি ক্যামেরা। যা কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হবে।

পুলিশ ও র‍্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সম্মিলিতভাবে এবারের জাতীয় ঈদগা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। মাঠের আশপাশের প্রতিটি উঁচু ভবনের ছাদে বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে শক্তিশালী বাইনোকুলার দিয়ে পুরো এলাকার ওপর নজর রাখা হবে। আর ওয়াচ টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে অনেকের কাছেই থাকবে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল। যে সব রাইফেল দিয়ে অন্তত এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরের লক্ষ্য বস্তুকে অনায়াসে আঘাত হানা যাবে। এছাড়া ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায়ও বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক গোপন মুভি ক্যামেরা। তবে ঈদে কোনো ধরনের নাশকতার শঙ্কা নেই বলে ডিএমপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, করোনা মহামারি অতিক্রম করে তিন বছর পরে ঢাকাবাসী যেন আবারও জাতীয় ঈদগা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, এজন্য সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগা মাঠ সুন্দর করে সাজানোর কাজ চলছে। ঈদের প্রধান জামাতের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কাজ করছে। একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে ঢাকাবাসী জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নিতে পারেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সূত্রে আরও জানা গেছে, মূলত দুটি প্রবেশপথ রাখা হচ্ছে জাতীয় ঈদগা মাঠে প্রবেশের জন্য। একটি থাকবে হাইকোর্টের সামনের দিকে। অপরটি থাকবে হাইকোর্টের মাজারের দিকে। প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাঠে প্রবেশের আগে সন্দেহভাজনদের হ্যান্ড মেন্টাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। এর বাইরে ঈদগা মাঠের আশপাশের সব আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই আশপাশের আবাসিক হোটেলের রেজিস্টার বই চেক করা হচ্ছে। হোটেলে আগত নতুন বোর্ডারদের যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় ঈদগা মাঠের আশপাশের মেসে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে পাড়ামহল্লায় সন্দেহভাজনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।

পুলিশ ও র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন ভোরে দুই দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল টিম দিয়ে পুরো মাঠে তল্লাশি চালানো হবে। সাধারণ মানুষের গাড়ি রাখার স্থানগুলোতেও বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এবার জাতীয় ঈদগা মাঠে ঈদের নামাজের জামাতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধান বিচারপতি, বিচারকগণ, বিদেশি কূটনৈতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সর্বস্তরের মুসল্লিগণের। এ জন্য নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি যানবাহন চলাচল ও পার্কিংয়েও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাঠের বাইরে আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবিলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। জাতীয় ঈদগা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহনের চলাচলের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গোপন মুভি ক্যামেরা ও সিসি টিভি মনিটরিং করা হবে সচিবালয়ের পাশে নবাব আব্দুল গণি রোড স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকে। পার্কিং করতে যাওয়া বাহন তল্লাশির পর পার্কিং করতে দেয়া হবে।

গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জাতীয় ঈদগা মাঠের নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয় পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

ঈদ উপলক্ষে র‍্যাবের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বাহিনীটির মহাপরিচালক হেলিকপ্টারযোগে সদরঘাট, মাওয়া, পোস্তগোলা, মেঘনা ব্রিজ, গাবতলী, আরিচাঘাট, চন্দ্রা, বঙ্গবন্ধু সেতু, ভালুকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ঘোড়াশাল, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন।

সরজমিন দেখা গেছে, জাতীয় ঈদগা মাঠের প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই ছোট ছোট গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। মাঠের উঁচু নিচু জায়গা সমতল করা হয়েছে। যেখানে ঘাস নেই, সেসব জায়গায় নতুন করে ঘাস লাগানো হয়েছে। বৃষ্টি ও রোদের কারণে ত্রিপল টানানোর কাজও প্রায় শেষের পথে।

এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ, সিলিং ও স্ট্যান্ড ফ্যানসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। থাকছে বাড়তি আলোর ব্যবস্থা। ঈদগা ময়দানের চারদিকে থাকা গ্রিলের বেড়ার চুরি যাওয়া কিছু রড নতুন করে লাগানো হয়েছে। যাতে কেউ মূল গেট ছাড়া ঈদগা মাঠে প্রবেশ করতে না পারে।

জাতীয় ঈদগা মাঠের চারদিকের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে বসানো হচ্ছে চেকপোস্ট। বঙ্গভবনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা কয়েক দিন বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকার রাস্তায় যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই গাড়ি পার্কিং ও পার্কিংসহ চলাচলের রাস্তা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ