ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

মহাসড়কে ‘টম অ্যান্ড জেরি’

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪৯

মহাসড়কে নসিমন-করিমন (ইঞ্জিনচালিত ভ্যান), রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা, সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও থামানো যাচ্ছে না। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এসব যান মহাসড়কে চলার অনুমোদন নেই। বিশাল হাইওয়ে এলাকায় চোখ এড়িয়ে এগুলো চলাচল করে। দেখামাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের ভাষায়— ব্যাপারটা অনেকটা জনপ্রিয় কার্টুন ক্যারেকটার টম অ্যান্ড জেরির মতো।

দুর্ঘটনা রোধে ২০১৫ সালের আগস্টে দেশের ২২টি প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এরপর, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সব প্রধান মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে সেই নির্দেশকে আরও জোরদার করেন হাইকোর্ট। গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদনবিহীন ইজিবাইক, নসিমন, করিমন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির বিষয়টিও জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু নির্দেশনা, নিষেধাজ্ঞা, নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় নানা সমস্যা। আর নিষেধাজ্ঞা না মানার প্রবণতার কারণে অবৈধ এ বাহনগুলো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে।

সবসময় যে শুধু যাত্রীরাই নিহত হচ্ছেন এমন নয়, মহাসড়কের পাশ দিয়ে চলাচলরত পথচারী বা সড়কের পাশের দোকানিও প্রাণ হারাচ্ছেন ঘাতক কোনো যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০২ জন। ২০২২ সালের চেয়ে বিদায়ী ২০২৩ সালে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অবাধে ইজিবাইক চলছে। এটা সবাই জানে, এসবের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার-পাঁচগুণ বেড়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে থ্রি হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি নামে। বর্তমান সরকার গত ১৫ বছরে সড়কে অবকাঠামো নির্মাণে যতটা সাফল্য দেখিয়েছে, ঠিক ততটা ব্যর্থ হয়েছে সড়কে নৈরাজ্য ঠেকাতে।’ তিনি আশা করেন, ‘নতুন মেয়াদে সরকার দুর্ঘটনা কমাতে উদ্যোগী হবে।’

এদিকে মহাসড়কে এ ছোট, ধীরগতির যানবাহনের দাপটের পেছনে কারা পৃষ্ঠপোষক জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচআর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম বলেন, ‘এর সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন জড়িয়ে রয়েছে, সেটাও ভাবতে হবে। ধরেন আশপাশের কোনো এলাকায় বা হাসপাতালে এলাকাবাসী যাবেন তখন তারা এ ধরনের বাহন ব্যবহার করেন। মহাসড়ক পার হয়ে হয়তো উল্টোদিকের কোনো গ্রামে যাবেন, তখন দুর্ঘটনা ঘটে। এদের যেহেতু মহাসড়কে চলার অনুমোদন নেই, ফলে পুরো চলাচলটা তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে করেন। আমাদের দিক থেকে নানা উদ্যোগ-নিয়মিত পাহারা দেওয়ার ব্যাপারগুলো আছে এবং অনেকে ধরাও পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের হাইওয়ে এত দীর্ঘ, পুরোটা পাহারা দেওয়ার জনবল নেই। ফলে যেসব জায়গায় পুলিশ থাকে, তারা এ বাহনগুলো আটক করে ফেরত পাঠায়। ব্যাপারটা অনেকটা টম অ্যান্ড জেরির মতো হয়ে গেছে বলতে পারেন।’

২০২৩ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাসড়কে ভটভটি, নসিমন ও করিমনের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহন চলাচল বন্ধের দিকে যাবে না সরকার। আবারও ক্ষমতায় এলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বর্তমান সভাপতি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো বর্তমান কমিটির কোনো মিটিং হয়নি। যখন মিটিং হবে তখন অবশ্যই বিষয়টি দেখব।’

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ