ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় স্বজনরা

প্রকাশনার সময়: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৭

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ অবস্থানরত নাবিকদের স্বজনরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। তারা জাহাজের মালিক ও সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনতে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা চালান হচ্ছে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আর জলদস্যুরা মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লাখ ডলার দাবি করেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজটিতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মতো খাবার আছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি রয়েছে ২০০ টন। তবে দাহ্য হওয়ায় জাহাজে পরিবহনরত ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় জাহাজটির মালিকপক্ষ এস আর শিপিং-এর কর্মকর্তাদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা যখন এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল, তখন কৌশলে তিনি এ বার্তা পাঠান।

আতিকউল্লাহ খান বলেন, ‘প্রক্সিমেটলি ২০২৫ দিনের প্রোভিশন (রসদ) আছে স্যার। ২০০ টন ফ্রেশ ওয়াটার আছে। আমরা অলরেডি সবাইকে বলছি ফ্রেশ ওয়াটার সেফলি ব্যবহার করতে। প্রোভিসনও (রসদ) আমরা ওভাবে হ্যান্ডেল করব।’

জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে। অ্যাবাউট ফিফটি ফাইভ থাউজ্যান্ডস। এটি একটু ডেইঞ্জারাস কার্গো, এটা হেজার্ড আছে। এটার মিথেন কনসেনট্রেশন বাড়ে। সর্বশেষ অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পার্সেন্ট ছিল। এটা রেগুলার আপডেট নিতে হয়। ইনক্রিজ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হবে।’

ওই অডিও বার্তায় জাহাজে জলদস্যুদের হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা)। এ সময় একটা হাই স্পিডবোট (দ্রুতগতির স্পিডবোট) আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম দেই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা (জলদস্যুরা) চলে এলো।’

আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি। এর আগে জিম্মি করা ইরানের মালিকানাধীন একটি মাছ ধরার জাহাজ দিয়ে তারা সাগরে বড় জাহাজ খুঁজতেছিল। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আগামীকাল সেখানে পৌঁছাব। যতটুক কথা হয়েছে, সেখানে আমাদের অপর একটি পার্টির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

বুধবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। আগামী ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে সোমালিয়ার কোনো বন্দরে নোঙর করা হতে পারে জাহাজটি। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন ‘জলদস্যুদের নিজস্ব চ্যানেল আছে। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে এ কাজটি করে। যারা জাহাজ ছিনতাই করেছে তারা সোমালিয়া বন্দরে নিয়ে গিয়ে অন্য পার্টির কাছে দিয়ে দেবে। তারাই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’ ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত সে ধরনের মেসেজ আসেনি। তাদের পদক্ষেপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’ বলেন মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।

নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর: ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা এখন পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নৌপথে যাতায়াতের প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তারা জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের।

জাহাজটি উদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রথম যে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো ২৩ জন নাবিকের জীবন নিরাপদ রাখা। জীবন রক্ষা করে তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা। এটি হলো প্রথম কাজ। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত হয়ে নাবিকদের রক্ষা করাসহ জাহাজটিকে উদ্ধার করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

টাকা না দিলে মেরে ফেলবে— জিম্মিদের শেষ বার্তা : ‘আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের মেরে ফেলবে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।’ স্ত্রী মিনা আজমিনকে পাঠানো শেষ ভয়েস মেসেজে এ কথাটুকুই বলেছেন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান। গত মঙ্গলবার প্রথম রোজার ইফতারের পর স্বামীর পাঠানো এই মেসেজ পেয়ে বারবার মূর্ছা যান আতিক উল্লাহ খানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম বলেন, ‘আমরা যখন ইফতার করছিলাম, এর মাঝেই আমার ছেলে ভয়েস মেসেজে জানায়, তাদের সবার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জাহাজটি সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

“কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রীকে পাঠানো মেসেজে জলদস্যুরা টাকা দাবি করেছে বলে জানায়, না হলে ওদের মেরে ফেলবে। বিষয়টা সবাইকে জানাতে বলেছে সে। এটা শোনার পর থেকে আতিকের স্ত্রী বারবার বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছে। সে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আরও তিনটা মেয়ে আছে। মেয়েরা বারবার এসে জানতে চাইছে, কান্নাকাটি করছে, ‘আমাদের বাবা কোথায়’ বলে।” বলেন শাহনুর বেগম। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আতিক তার স্ত্রী মিনাকে বলছিলেন, ‘কয়েক দিন আমাকে ফোনে পাবে না। আমি নেটওয়ার্কের বাইরে থাকব।’ জিম্মি নাবিক আতিকের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়। মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকতেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়। এর আগে মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক ভয়েস বার্তায় ওই সময়ের ঘটনা সম্পর্কে জানান বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান।

আতিক উল্লাহ খানের বন্ধু জুলকার নাইম বলেন, ‘বিকেল (মঙ্গলবার) সাড়ে ৪টার দিকে আমাকে ভয়েস মেসেজ পাঠায় আতিক। সে বলে, ‘দোয়া করিস পরিবারকে দেখাশোনা করিস।’ ওই এক মিনিটই কথা হয়েছে। ওয়াশরুম থেকে এ কথাগুলো বলেছিল সে। এরপর আর যোযোগ হয়নি।’ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি আছেন ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আমরা আক্রমণের শিকার। আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’ এদিকে গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশি জাহাজটি এখন উপকূল থেকে প্রায় ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে। সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।

এমভি আবদুল্লাহয় জিম্মি যারা: জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন— জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালি থানার বাসিন্দা, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়। এছাড়া ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়। মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়। মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারাখন্দ ও মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

কেএসআরএম অফিসে স্বজনদের ভিড়: সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক ও ক্রুদের ফিরে পেতে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের চট্টগ্রাম অফিসে ভিড় করছেন স্বজনরা। এ সময় কেএসআরএমের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হবে। ঘটনার পর থেকেই নাবিকদের স্বজনরা কেএসআরএমের অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। গতকাল বুধবার সকালে অনেকেই চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের অফিসে আসেন।

কবির গ্রুপের অফিসে যারা আসেন তাদের কারও বাবা, কারও সন্তান বা স্বজন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন। এ সময় তাদের অনেককেই জিম্মি স্বজনদের ছবি প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের পরিবারও আসে কবির গ্রুপের অফিসে। ছেলে আবদুল্লাহর ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোৎস্না বেগম। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয়েছে। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের সন্তানদের ফেরত চাইতে এসেছি।’

স্বামীর খোঁজে এসেছিলেন জিম্মি নাবিক নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘অডিও বার্তায় জানিয়েছেন তাদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জাহাজে তখন অস্ত্রশস্ত্রসহ ৫০ জনের মতো জলদস্যু ছিল। তাদের মুক্ত করতে আমরা যেন মালিকপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করি— এ কথা বলেছেন নুরউদ্দিনে।’

ফেরদৌসের মতোই স্বামীর খোঁজে আসেন নাবিক শফিকুল ইসলামের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার টাকা পয়সা কিছু চাই না, শুধু সন্তানকে তার বাবার চেহারাটা দেখাতে চাই।’

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালেও নাকিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই ভালো আছেন। আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। যে কোনো মূল্যে নাবিক ও ক্রুদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করার বিষয়ে জোর দিচ্ছি। সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যা যা করার দরকার সব করব।’

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ