ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা বেজে ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ আগুনে চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি। চিৎকার, কান্নার আর্তনাদ, স্বজনদের ফোন, আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে বেইলি রোড। এসবই রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের সামনের দৃশ্য।
আট তলা এই ভবনের নিচ তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে, ভবনে থাকা মানুষ আশ্রয় নিতে থাকে ভবনের ছাদে। ফায়ার সার্ভিসের ২ ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন যতক্ষণে নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে মৃতের সারি বেশ দীর্ঘ হয়ে গেছে।
সবাইকে নিয়ে আসা হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
সর্বশেষ ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৫টি মরদেহের পরিচয় এখনো মেলেনি। তাছাড়া একটি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এর আগে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল রাত পৌনে ৩টায় সাংবাদিকদের বলেন, মৃতদের অধিকাংশরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
এদিকে, মৃতদের দাফনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থান। সকালে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, ১৭ জন গোর খোদক খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যস্ত।
গোরখোদক সর্দার ফারুক জানান, প্রতিদিন সকালেই নতুন নতুন কবর খোঁড়া হয়। গতকালের বেইলি রোডের ঘটনার জন্য আজ ১৭ জন মিলে কবর খোঁড়ার কাজ চালাচ্ছেন। রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে অতিরিক্ত ২৫-৩০টি কবর বেশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের জন্য খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর। ছবি- জাওয়াদ মাহমুদ
আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মো. নুরুল হুদা নয়া শতাব্দীকে বলেন, রাজধানীতে ঘটা যেকোনো বড় দুর্যোগে আমরা প্রস্তুত থাকি। এখন পর্যন্ত কবর খোঁড়া নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে অফিসিয়ালি আমাদের কোনো নির্দেশনা না আসলেও, সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৩ এর সমাজকল্যাণ কর্মকতা মৌখিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।
‘তাছাড়া এধরণের ঘটনায় পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অতিরিক্ত কবর খুঁড়ে রাখি। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখি’, যোগ করেন তিনি।
নুরুল হুদা আরো জানান, দৈনিক ৩০টির মতো কবর খোঁড়ার কাজ থাকলেও, আজ গোর খোদকদের অতিরিক্ত ৩০টি কবর বেশি খোঁড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নয়াশতাব্দী/জেএম/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ