প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় গিয়েও কাজ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। অন্যদিকে, বিনা খরচের নামে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে কর্মীদের। রিক্রুটিং এজেন্সির নেতারা বলছেন, কর্মীদের কাজ না পাওয়ার দায় দূতাবাসের। আর অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতিতে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, সরকারের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ‘কলিং ভিসায়’ মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ৪ লাখ কর্মী। সম্প্রতি বিদেশে ভালো কাজের আশায় এশিয়ার দেশটিতে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের একজন বলেন, আমরা মালয়েশিয়া এসেছি তিন মাসের বেশি হবে। চতুর্থ মাস চলছে। আমরা খুব নির্যাতিত ভাবে আছি।
এই কর্মীর মতো একই অবস্থা আরও অনেক প্রবাসীর। ‘কলিং ভিসায়’ মালয়েশিয়ায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সরকারি নথিতে মাত্র ৭৮ হাজার টাকা লেখা থাকলেও, একেকজনের খরচ হয়েছে চার থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যেই বিনা খরচে সরকারিভাবে দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে আরও কর্মী।
বিদেশে কাজের আশায় রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালে আসা একজন বলেন, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে মালয়েশিয়ান কোম্পানি ‘ন্যাশনগেটস্ সলিউশন’ বিনা খরচে কিছু লোক নেবে। তাই এসেছি। আরেকজন বলেন, ডেলিগেটের কাছে ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হই। এরপর তারা (রিক্রুটিং এজেন্সি) আমাকে আবার ডাকেন মেডিকেল করার জন্য। আমি মেডিকেল করি, তারপর ‘কলিং ভিসা’ আসে।
মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ কেমন হবে তা জানিয়ে অপর একজন বলেন, আমাদের ওখানে যাওয়ার পর তারা (ন্যাশনগেটস্ সলিউশন) আমাদের ট্রেনিং দেবে। এরপর তারা যে যেই কাজ ভালো করতে পারবে তাকে সেই কাজ দেবে।
চুক্তিপত্র থাকার পরও কেন কাজ মিলছে না, কাজ না পাওয়ার দায় কেন নিচ্ছে না মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা- এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) অভিযোগের তির, দূতাবাস ও সরকারের দিকে। বছরের পর বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের দুর্দশার একই চিত্র বারবার উঠে এলেও নির্বিকার তারা। বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কাজ না পাওয়া, কোম্পানির যে অ্যাড্রেস (ঠিকানা) নেই- এটার সত্যায়ন কে করছে, এটা তো দূতাবাস করছে।
তবে সমস্যা সমাধানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর দাবি, এসবের ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয়ে যারা অ্যাম্বাসির লেবার মিনিস্ট্রিতে আছে, তারা কাজ করছে। তদন্ত করছে। তারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই আমাদের পাস দেবে এবং দিচ্ছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দশার দায় এড়াতে পারে না সরকার। বিদেশের শ্রমবাজার নিয়ে সরকারের আরও সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, শ্রমবাজার নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে দরকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ