ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কতটা বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম?

‘সরকারের ভ্রান্ত নীতির বলি হচ্ছেন গ্রাহকরা’
প্রকাশনার সময়: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:১৩ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:২১

মার্চের প্রথম দিন থেকে ফের বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। একইসঙ্গে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের কথাও বলেছেন খনিজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এখন পর্যন্ত যা আভাস পাওয়া গেছে, তাতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩০ থেকে ৮০ পয়সা বাড়তে পারে। ২০২৩ সালের মার্চে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। তখন বাড়ানো হয় শতকরা পাঁচ ভাগ।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার তিন থেকে চার শতাংশ বাড়বে। তবে বিদ্যুতের দামের নানা ধরনের স্লট থাকায়, লাইফ লাইন পর্যায়ে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর ভাষায়, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে।’

গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার এবং গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে শীত যাওয়ার আগেই লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। তবে পিডিবি দাবি করছে, এখন পর্যন্ত কোনো লোডশোডিং নেই।

এ বিষয়ে পিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম আহসান বলেন, বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৫৯৮ মেগাওয়াট, উৎপাদনও ছিল ঠিক সমপরিমাণ। কোনো ঘাটতি ছিল না। যদিও বাস্তবে এদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে।

এদিকে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট হলেও, সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট হয়েছে গত বছরের ১৯ এপ্রিল। এ বছর গরমের সময় সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও কোনোভাবেই লোডশেডিং এড়ানো যাবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। কারণ, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূল কাঁচামাল হলো গ্যাস। এখন আমাদের গ্যাসেরই সঙ্কট চলছে। তাই উৎপাদন বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে। আর সেটা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে নেওয়া ছাড়া সরকার আর কোনো পথ দেখছে না। ফলে লোডশেডিং করেই সরকার খরচ কমাবে।’

তার কথা, ‘বারবার একতরফাভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কোনো গণশুনানি করা হচ্ছে না। কিন্তু ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটিয়ে, দুর্নীতি কমিয়ে, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বসিয়ে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানো সম্ভব। সরকার সেটা তো করছে না। সাধারণ মানুষের ওপর দামের বোঝা চাপিয়ে কষ্ট দিচ্ছে।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে গ্যাস লাগে, সেটা আমাদের আছে। কিন্তু গ্যাস উত্তোলন না করে একটি মহলকে সু্বিবধা দিতে আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ছে।’

বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে বলে মন্তব্য করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়বে। বিদ্যুৎ খরচ বাড়ার প্রভাব পড়ে সবখানে। কৃষি ও ভোগ্যপণ্য, পরিবহণ খরচ সবকিছু বেড়ে যায়। কিন্তু সরকার চাইলে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়েও পারে। ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের নামে যে অর্থ পরিশোধ করা হয়, সেটা বাদ দিলে উৎপাদন খরচ কমে যায়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও এখানে কমছে না। এই জ্বালানি তেলের ব্যবসা আবার সরকার এবকভাবে করে।’

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়লে পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর আগে শিল্প গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমরা গ্যাস পাই না। আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ ভাগ এবং ইউরোপে ১৭ ভাগ পোশাক রফতানি কমে গেছে।’

তবে বিষয়টিকে পুরো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, ‘ভ্রান্ত নীতির কারণে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যেখানে আমাদের জ্বালানি সার্বভৌমত্ব থাকার কথা ছিল, সেখানে আমরা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছি। ফলে আমরা এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ- একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। এর মধ্যে আমাদের গ্যাস থাকলেও তা উত্তোলন না করে আমরা এলএনজি আমদানি করছি। ফলে বিদ্যুতে আমরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ছি৷ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই খরচ নেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। সরকারের ভ্রান্ত নীতির বলি হচ্ছেন গ্রাহকরা।’

তার কথায়, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পরিবহণ খরচ। ফলে সার্বিকভাবে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। বেড়ে যায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি। যার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর।’

তিতুমীর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আয় না বাড়লে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, সীমিত আয়ের মানুষ, তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। তারা কম কেনেন, কম খান। ফলে পুষ্টির অভাব দেখা দেয় আর দারিদ্র্য বেড়ে যায়। যেমনটা বেড়েছে ঢাকা শহরেও।’ সূত্র: ডয়চে ভেলে

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ