ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক ৪৫ সন্ত্রাসীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার দুই আসামিও রয়েছে। এছাড়া বাকি ৪৩ জন দেশের বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত বলে জানা গেছে। তারা ভারতেও নানা অপকর্ম করে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে।
এ নিয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। ভারতের কোন কোন কারাগারে ওইসব অপরাধী আটক আছে তার একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই তালিকা অনুযায়ী তাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মোরসালিন আহম্মেদ ও মোস্তাকিন আহমেদ এক যুগের বেশি সময় ধরে ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছে। নানা চেষ্টা করেও তাদের দেশে ফেরত আনতে পারেনি সরকার। কী কারণে তাদের আনা যাচ্ছে না তাও পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে সম্প্রতি তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে তোড়জোড় শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের মতোই আরও ৪৩ দুর্ধর্ষ অপরাধীকেও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৪৫ অপরাধী ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছে। তাদের মধ্যে সুব্রত বাইন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার অন্যতম আসামি মোরসালিন আহম্মেদ, মোস্তাকিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দিপুসহ অন্যদের ফেরত আনতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
সুব্রত বাইন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে নেপাল গিয়ে ধরা পড়ে। কিন্তু নেপাল কারাগারের সুড়ঙ্গ ভেঙে পালিয়ে পুনরায় কলকাতায় এলে সে আবার ধরা পড়ে। অবৈধভাবে কলকাতায় বসবাস করায় ওই দেশের আদালত বাইনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। চট্টগ্রামে ৮ ছাত্রলীগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন ধরা পড়ে কলকাতায়। সুব্রত বাইনের নামে ভারতেই পাঁচটি পাসপোর্ট আছে। ওইসব পাসপোর্টে আলী মিয়া ওরফে আক্কাশ, রবিন ওরফে সজীব, ফতেহ আলী উল্লেখ করে সুব্রত বাইন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীরা আত্মগোপনে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ওই দেশ থেকে কেউ কেউ বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
দালালদের সঙ্গে আঁতাত করে পাসপোর্ট পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তথ্যানুযায়ী পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, আগা শামীম, মানিক, শাহাদৎ, ছোট হান্নান, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, ইমাম হোসেন, জয়, নাসির উদ্দিন, খোরশেদ আলম, তৌফিকুল আলম, শাহীন সিকদার, নবউত্তম সাহা, মফিজুর রহমান, শাহাজাদা, এমটি বাবু, নবী হোসেন, মকবুল হোসেন, কাজল, মুকুল, কিলার মুন্না, রানা, সবুজ, বিকাশ, মিন্টু, জাকির, রেজা, তুহিন, বুলবুল, শরীফ, টিটু, প্রকাশ, জিয়া, বিজু, রতন, ইমরান, কালা সেন্টু, খোরশেদ, এবায়দুল, কাইয়ুম, পল্টন মোক্তা, ভাগিনা মামুন, পিয়াল, কিলার ইকবাল, নবী, জিয়া, ফজলু, ছোট বাবু, সুনীল, কলকাতার মাকুয়া স্ট্রিট, বনগাঁ, চব্বিশ পরগনা, হোটেলপাড়া ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট, গালিব স্ট্রিট, ক্যাসেট, স্ট্রিট, বশিরগাঁও, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, নদীয়াসহ আরও কয়েকটি স্থানে বসবাস করছে।
এ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব অপরাধী আটক আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে আমরা ভারত থেকে বেশ কয়েকজন অপরাধীকে ফেরত আনা গেছে। বাকিদেরও ফেরত আনা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মাস দুয়েক আগে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আটক বাংলাদেশি অপরাধীদের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে ভারতকে। অপরাধীদের বিষয়ে ভারত আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। তাদের মধ্যে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে। পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শিবির ক্যাডার সাজ্জাদও আছে। আটক সন্ত্রাসীদের দেশে ফিরিয়ে এনে প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি ও হুজির দুই সদস্য মোরসালিন ও মোস্তাকিন ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দিপুসহ ৪৫ জনের নাম আছে তালিকায়। বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় কীভাবে তাদের দেশে ফেরত আনা যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ পর্যন্ত যে ক’জন অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে তাদের পুশব্যাকের মাধ্যমেই করা হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদেরও একইভাবে ফেরত আনা হবে বলে আমরা আশা করছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ধৃত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে দেনদরবার করা হচ্ছে। তাদের পুশব্যাকের মাধ্যমেই মূলত আনা হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি হয়েছে অনেক আগেই। তারপরও ধৃত অপরাধীদের ফেরত আনতে সমস্যা হচ্ছে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের আনার চেষ্টা করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাগারে আটক ছাড়াও ভারতে যারা পলাতক রয়েছে তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই চোরাকারবারিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ওই দেশে তারা মাছের ব্যবসা, চোরাকারবারি ও অস্ত্রের ব্যবসা করছে। মাঝে মধ্যে তারা বাংলাদেশে এসে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে পুনরায় ভারত চলে যাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। মাঝে মধ্যে দুই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনায় বসে অপরাধীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আবার সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ব্যাপারে তালিকা আদান-প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা দুই দেশের শান্তি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তাদের প্রতিহত করতে না পারলে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলাও নষ্ট হয়ে যাবে। তারা যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে থাকা সহযোগীদের কাছে পাঠাচ্ছে মাদক ও অস্ত্রের চালান।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ