ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

‘পাওনা’ পরিশোধে বন্ড ইস্যু

প্রকাশনার সময়: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৭

বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বকেয়া পাওনা পরিশোধে আরও ২৪টি ব্যাংকের অনুকূলে ৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর (আইপিপি) বকেয়া পাওনা পরিশোধে গত ২৪ জানুয়ারি (বুধবার) ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যু করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, প্রতি বছরই বিদ্যুৎ ও সার খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। অর্থ সংকটের কারণে গত কয়েক বছর সরকারের বিপুল অঙ্কের ভর্তুকির অর্থ বকেয়া পড়েছে। আর তাই বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ভর্তুকি পরিশোধে ২৪টি ব্যাংকের সঙ্গে বন্ড ইস্যু বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছে অর্থবিভাগ। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ ভবনে এসব ব্যাংক, পাওনাদার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে এ চুক্তি সই হয় বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন এসব ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ইস্যুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যায়ক্রমে ব্যাংকগুলোকে বন্ড ইস্যু করে দেবে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সার ও বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বকেয়া পড়েছে। এ বকেয়ার কারণে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো তাদের ব্যাংকঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগ বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি ও সার খাতের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধের জন্য বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সার আমদানির পাওনা পরিশোধের জন্য ৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার একটি বিশেষ বন্ড ইস্যু করে।

অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সব বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির বকেয়া পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। এর জন্য সরকারকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে হবে বলে জানান তারা। এ বন্ডগুলোর মেয়াদ হবে ১০ বছর। আর সুদের হার বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো রেটের সমান, যা বর্তমানে ৮ শতাংশ।

এদিকে গত ২৪ জানুয়ারি (বুধবার) প্রথমবারের মতো বন্ড ইস্যু করে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর (আইপিপি) বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা শুরু করেছে সরকার। বিদ্যুৎ কোম্পানির পাওনা মেটাতে পূবালী ব্যাংক ও দ্য সিটি ব্যাংক পিএলসিকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বুধবার সিটি ব্যাংকের অনুকূলে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা এবং পূবালী ব্যাংকের অনুকূলে ৭৮ কোটি টাকার বন্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি বন্ডের মেয়াদ ১০ বছর এবং সুদহার বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো রেটের সমান, যা বর্তমানে ৮ শতাংশ।

বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে যেসব আইপিপির দেনা পরিশোধ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— সামিট পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, আনলিমা পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, লাখধানাভী পাওয়ার, বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার ও এনার্জিপ্যাক।

অর্থ বিভাগের ট্রেজারি অ্যান্ড ডেট ম্যানেজমেন্ট অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পর্যায়ক্রমে সব আইপিপির বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। এতে সরকারকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে হবে।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি এবং সামিট গ্রুপের পরিচালক ফয়সাল খান বলেন, যেসব স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্যের বিপরীতে কার্যকরী মূলধন রয়েছে, ওইসব ব্যাংকে অর্থ মন্ত্রণালয় সমর্থিত বন্ড ইস্যু করা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, ‘বিপিডিবি যে পরিমাণ ভর্তুকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পায়নি, ওই পরিমাণ বন্ড ছাড়া হবে। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের কাছে আইপিপিগুলোর পাওনা এভাবে বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করার কাজ শুরু হলো।’ তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনের বকেয়া পাওনা পেতে শুরু করায় আইপিপিগুলো সন্তুষ্ট।

ফয়সাল খান বলেন, ‘আশা করি বিপিদিবি মাসিক বিল নিয়মিত করবে এবং চুক্তি অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ শুরু করবে, যাতে আইপিপিগুলো চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।’

আইপিপিগুলোর বকেয়া এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এজন্য অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।

অবশ্য আইপিপি ও সারের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করতে আগে থেকেই বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ বিভাগ। গত ৪ জানুয়ারি প্রথম দিন ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করে সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে পাঁচ ব্যাংকের অনুকূলে সার খাতের ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যু করেছে সরকার। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংককে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি, জনতা ব্যাংককে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি, ইসলামী ব্যাংককে ২ হাজার কোটি, আইএফআইসি ব্যাংককে ৪৫৯ কোটি এবং সিটি ব্যাংকের ৩৯৭৩৯৭ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ