শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

নগরীতে ছিনতাই ডাকাতি আতঙ্ক

প্রকাশনার সময়: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫১

রাজধানীতে বেড়ে গেছে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ফলে বেড়ছে আতঙ্কও। এসব ঘটনায় অনেকে মামলা দায়ের করলেও আসামি গ্রেপ্তারের নজির খুবই কম। এছাড়া অনেকে আবার মামলা করতেও অনিহা দেখান। ফলে অনেক ঘটনা পুলিশের অজানাই থেকে যাচ্ছে। এতে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।

সম্প্রতি পুলিশের পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। সার্বিক এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ঊর্ধ্বতনরা। ডিএমপি সূত্রমতে, ২০২১ সালে নগরে ডাকাতির মামলা হয় ২৩টি। পরের বছর সে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭। আর ২০২৩ সালে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪টিতে। এর আগে ২০১৯ ও ২০ সালে ঢাকা মহানগরে ডাকাতির ঘটনায় ২১টি করে মামলা হয়েছিল।

একইভাবে ২০২১ সালে মহানগরে দস্যুতার ঘটনায় ১৪৫টি মামলা হয়। পরের বছরও মামলার সংখ্যা একই ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে দস্যুতার ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ১৯৯। পুলিশের ভাষ্যমতে, এ শহরে ডাকাতি ও দস্যুতায় যুক্ত আছেন ৪ হাজার ৪৬১ ব্যক্তি। দলবদ্ধভাবে মালামাল লুটের ঘটনায় অপরাধী পাঁচজনের কম হলে দস্যুতার মামলা হয়। সে হিসাবে ঢাকায় দস্যুতার ঘটনাও তিন বছরে বেড়েছে।

পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে ঢাকায় ৬৩টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়। পরের বছর ২০২২ সালে সে মামলার সংখ্যা বেড়ে ১০৩টিতে পৌঁছায়। পরের বছরও ছিনতাইয়ের ১০৩টি মামলা হয়। জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর বিকালে উত্তরায় আলআরাফাহ্ ব্যাংক থেকে ৪৮ লাখ টাকা তুলে প্রাইভেট কারে চড়ে বনানীর অফিসের উদ্দেশে রওনা হন একটি টেক্সটাইল কারখানার কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও শাহজাহান মিয়া।

তাদের গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার পর একটি প্রাইভেট কার তাদের থামতে সংকেত দেয়। গাড়ি থামাতেই র‍্যাব পরিচয়ে পাঁচ থেকে ছয়জন গাড়িতে উঠে পড়েন। তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে বলে দুজনকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ, মুখ বেঁধে ফেলেন। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে ৩০০ ফুট রাস্তায় নিয়ে যান।

দুজনের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছাড়াও তিনটি মুঠোফোন এবং কোম্পানির খালি চেকবই ছিনিয়ে নেন তারা। এ ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ২৩ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার আগে গত ২৭ জুন রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের একটি বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১১ লাখ টাকা লুট করে নেয় এক দল ডাকাত। ভুক্তভোগী গৃহকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ছয়-সাতজন ডাকাত ঢুকে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো বাসা তছনছ করে। তাদের মধ্যে দুজনের মাস্ক পরা ছিল। সবার বয়স আনুমানিক ২৫-৩০ বছর। তাদের হাতে ছুরি ও চাপাতি ছিল।’

রাজধানীতে ডাকাতির ঘটনা বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে পুলিশের তথ্যেও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গত তিন বছরের (২০২১-২০২৩ সাল) তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডাকাতির পাশাপাশি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। ছিনতাইকারীর ছুরিতে কারও কারও প্রাণ যাচ্ছে। গত বছর ১৬ জুলাই রাতে ধানমন্ডির শেখ জামাল ক্লাবের মাঠের পূর্ব পাশের ফুটপাতে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন আদনান সাঈদ ওরফে রাকিব (১৮) নামের এক কলেজছাত্র।

এরপর ৩১ জুলাই গভীর রাতে গুলিস্তান এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন ও তার ছেলে জসিম উদ্দিন আহত হন। কারওয়ানবাজারে তাদের মুরগির দোকান আছে। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার ছিনতাইকারী বাবা ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

একই দিন বিকালে মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদে ইমন মিয়া (১৭) নামের এক শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে মুঠোফোন ও টাকা-পয়সা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

এদিকে গত বছর সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এসআইভিএস) নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অপরাধীদের তথ্যভান্ডার গড়ে তোলে ডিএমপি। তাতে রাজধানীতে ছিনতাইয়ে ১ হাজার ৭৩৭ জন যুক্ত থাকার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অপহরণকারী পুলিশের তেজগাঁও বিভাগে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজধানীর একেক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান একেক রকম। যেমন গুলশানে উচ্চবিত্তের বসবাস আর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিম্নমধ্যবিত্তের বাস। মোহাম্মদপুরের বছিলা ও বেড়িবাঁধ এলাকা এবং আদাবর ও শের-ই-বাংলা নগর থানা এলাকায় বস্তি রয়েছে।

সেখানে ভাসমান ও নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। এদের একটি অংশ অপরাধে যুক্ত। তিনি বলেন, ঢাকাসহ একাধিক জেলার প্রবেশপথ মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে। কাজেই এ এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধীরা সহজেই ঢাকা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তাই ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা এ এলাকায় বেশি ঘটে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ২০২১ সালে রাজধানীতে চাঁদাবাজির ঘটনায় ২২টি মামলা হয়েছিল। ২০২২ সালে চাঁদাবাজির মামলা বেড়ে হয় ৫৯টি। ২০২৩ সালে চাঁদাবাজির মামলার তথ্য আলাদা করে সংরক্ষণ করা হয়নি বলে জানান ডিএমপির সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ মামলার তথ্য অন্য খাতের মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

২০২৩ সালে ডিএমপিতে অন্যান্য খাতে মোট ৮ হাজার ৭টি মামলা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ডিএমপিতে চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৮টি। পরের বছর সেই মামলা বেড়ে হয় ২২টি। ডিএমপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে রাজধানীতে অপহরণের ঘটনায় ৪৯টি মামলা হয়। ২০২২ সালে অপহরণের মামলা আর বাড়েনি। তবে ২০২৩ সালে এ মামলা বেড়ে হয় ৫৯টি।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ