শীত এলেই জমে ওঠে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট। প্রতিবছর এ সময় ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গুড়ের ভাড় নিয়ে হাজির হন গুড় উৎপাদনকারীরা। তবে এ বছর প্রতি কেজি গুড় ও পাটালিতে প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩০০ বছরের পুরোনো এই হাট থেকে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ২০ থেকে ৩০ ট্রাক খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে চলে আসছে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। শীতের তিন মাস এ হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা, যেমন- ঢাকার সাভার, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ বেশ কয়েক জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই হাটে এসে খেজুর গুড় কিনে নিয়ে যান।
সপ্তাহে দুদিন বসে সরোজগঞ্জের এই খেজুর গুড়ের হাট। এ বছর খেজুর গুড় প্রকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা এবং এক ভাঁড় গুড় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া পাটালি গুড় প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩৫০ কেজি দরে। যা গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বেশি। এছাড়াও মাটির হাঁড়ি বা ভাঁড়ের আকার ও ওজনভেদে দাম ওঠানামা করে।
এলাকার কয়েকজন গুড় বিক্রেতা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা খুব কষ্টের কাজ। এজন্য অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এছাড়া বর্তমানে ইটভাটায় পোড়ানোর কারণে খেজুর গাছের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। ফলে গাছিরা রসের অভাবে গুড় তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে খেজুর গুড়ের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
গুড় কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছরে খেজুর গুড়ের দাম বেশি। হাটে আমদানি কম হওয়ায় গুড়ের দাম বেড়েছে।
বরিশাল থেকে আসা পাইকারি গুড় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় পাইকারি কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। গুড়ের মান ভালো হওয়ায় প্রতি হাটে ২ থেকে ৪ ট্রাক গুড় ক্রয় করে থাকি। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম বেড়েছে।
সরোজগঞ্জ হাট ইজারাদার আব্দুল মালেক বলেন, ৩০০ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট থেকে প্রতি সপ্তাহ এক কোটি টাকার মতো কেনাবেচা হচ্ছে। আশা করা যায়, গতবারের তুলনায় এবার কেনাবেচা বেশি হবে।
গুড় ব্যবসায়ী আলামিন হোসেন বলেন, এ বছর গুড়ের দাম বেড়েছে। ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক ভাঁড় গুড় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটালি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এই হাটের গুড়ের বিশেষ চাহিদা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হাজারো ক্রেতা আসছেন গুড় কিনতে। গুড় ভেজালমুক্ত হওয়ায় কদর বেশি। চিনি বা কোনো রাসায়নিক উপাদান ছাড়াই তৈরি হচ্ছে এই গুড়।
গতবারের তুলনায় গুড়ের দাম বেশি জানিয়ে সিলেট থেকে গুড় কিনতে আসা ভবতোষ কুমার বলেন, দাম বেশি হলেও ভেজালমুক্ত গুড় কেনার জন্যই এই হাটে আসা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টন। এর বিক্রি মূল্য ধরা হয়েছে গড়ে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা হিসেবে ৬০ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হাটে গুড় কেনাবেচা চলছে। গতবারের তুলনায় জেলায় গুড় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। এখানে স্থানীয় কৃষকরা পরম যত্নে চিনিমুক্ত গুড়-পাটালি উৎপাদন করে হাটে বিক্রি করে থাকেন। এ কারণে গুড়ের চাহিদা বেশি।
অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, কেউ ভেজাল বা চিনিযুক্ত গুড়-পাটালি বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সবদিকে নজর রাখছি।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ