আর মাত্র চার দিন পর বসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। সংসদে কে হচ্ছে বিরোধী দল? ১১ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি নাকি ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট? জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, বিরোধী পক্ষ হিসেবেই তারা সংসদে থাকবেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কেউ কেউ বলছেন, সরকারের যৌক্তিক ও গঠনমূলক সমালোচনা করবেন তারা।
দলীয় প্রার্থীদের হারিয়ে ৬২ জন স্বতন্ত্র এবারের জাতীয় সংসদের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। ভিন্ন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কে হবে বিরোধী দল? কে হবেন বিরোধী দলীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হচ্ছে। জাতীয় পার্টি নিজেদের সংসদীয় দলের নেতা-উপনেতা ঠিক করে এরইমধ্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও স্পিকারের তরফ থেকে এখনও কোনো কিছু জানানো হয়নি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলছেন, সংসদে সরকার বিরোধী অবস্থানেই থাকবেন তারা। তিনি বলেন, কে বিরোধী দল হবে সেটা স্বিকৃতি দেওয়ার এক্তিয়ার স্পিকারের। এটা তার সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা সংসদীয় দল হিসেবে অপজিশনে কাজ করবো।
গত সাত জানুয়ারির ভোটে ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩ আসন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এতো স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও দেশে এই প্রথম। অংশগ্রহণমূলক ভোট উৎসাহিত করতে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন জিতে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা। তারা নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ীও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার কথা আগে বললেও এখন তারা সংসদ নেতার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। রোববার তাদের ডেকেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য নাহিদ নিগার বলেন, সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে যদি আমাকে বিরোধী পদে বসতে হয় তবে আমি সেটাও করবো। ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিরোধী দলে বসা আমার কষ্টের ব্যাপার।
মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম বলেন, আমরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবো না। ৬২ জনের মধ্যে অনেকেই আছেন আগে নির্বাচিত হয়েছেন। বয়োজ্যেষ্ঠও আছেন। তাদের পরামর্শ শোনা হবে। তিনবারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনও দলের সাথে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমরা যারা আছি, কেউ বিরোধী দল হতে ইচ্ছুক না। সংসদ নেত্রী আর দুয়েকদিনেক মধ্যে আমাদের নির্দেশনা দেবেন।
সংসদে যে অবস্থানেই থাকুকনা কেন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ । ফরিদপুর-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, সরকারদলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আমি ভোট দিতে পারবো। এখানে আমার ফ্লোরক্রসিং হবে না। প্রধানমন্ত্রী যে রাজনৈতিক ইশতেহার দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আমি কথা বলবো। পরামর্শ রাখবো। যদি জবাবদিহিতার কোনো ঘাটতি থাকে তা তুলে ধরবো। এ ব্যাপারে আমার সক্রিয় ভূমিকা থাকবে।
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, যাই ঘটুক না কেন সেটা কার্যপ্রণালী বিধি এবং সংবিধান মেনেই হবে। সব মিলে নতুন মেয়াদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সংসদ। ৩০ জানুয়ারি স্পষ্ট হবে কারা বসছেন বিরোধী দলের আসনে। ৩০০ আসনের মধ্যে কারা ওয়াক আউটসহ নানা তর্ক-বিতর্কে প্রাণবন্ত করে রাখবেন সংসদকে।
নয়া শতাব্দী /আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ