দেড় বছর আগে ফাতেমাকে গর্ভবতী অবস্থায় রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাসভবনের গেটের সামনে থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় কুড়িয়ে আনা হয়। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে থেকে বর্তমানে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ।
ওই আশ্রমে চিকিৎসা নিতে থাকা ফাতেমার ধীরে ধীরে ভালো লেগে যায় আশ্রমের স্বেচ্ছাসেবক মিরাজকে। অসুস্থ থাকাকালে সেবা করতে গিয়ে ফাতেমাকেও ভালো লেগে যায় ভোলার চরফ্যাশনের এই যুবকের। চিকিৎসা শেষে সুস্থ জীবনে ফিরলে তাদের ভালোলাগার বিষয়টি জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।
তবে ফাতেমার কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায়, আশ্রম কর্তৃপক্ষ মিরাজের পক্ষে থেকে তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। অকূলপাথারী ফাতেমা এতে রাজি হওয়ায়, মিরাজ হোসেন বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে, তারাও এতে সম্মত হন। এরপরেই তাদের বিয়ের আয়োজন করে আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
বিয়ের বিষয়ে মিরাজ হোসেন বলেন, চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় ফাতেমা অন্যান্য কর্মীদের চেয়ে আমার কথা বেশি শুনতো। যেভাবে বলতাম, সেভাবেই সে সবকিছু মেনে চলতো। এভাবে ধীরে ধীরে ফাতেমার প্রতি ভালোলাগা কাজ করে। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের চেয়ারম্যান লিটন সমাদ্দার দাদা ফাতেমাকে বিয়ের বিষয়টি জানালে, রাজি হয়ে যাই। পরে পরিবারকে পছন্দের বিষয়টা জানালে তারাও রাজি হয়ে যায়।
মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ফাতেমা জানান, তার কোনো পরিবার-পরিজন না থাকলেও, নতুন একটি পরিবার তিনি পাচ্ছেন। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বাকিটা জীবন মিরাজের সঙ্গেই কাটিয়ে দিতে চান তিনি।
এদিকে, ওই চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফাতেমা চিকিৎসাধীন থাকাকালেই জন্ম নেয় তার গর্ভের সন্তান। সেখানে মায়ের সঙ্গেই সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে উঠতে থাকে আট মাসের শিশুটি। আশ্রম কর্তৃপক্ষই তার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আশ্রমের চেয়ারম্যান লিটন সমাদ্দার।
এদিকে, মিরাজ-ফাতেমার বিয়েকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সেজেছে রাজধানীর কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার। আশ্রমের প্রবেশমুখে মিরাজ-ফাতেমার বিয়ের একটি বড় ব্যানার টানানো হয়েছে। আশ্রমের দেয়ালগুলো সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙের আলোক সজ্জায়। আশ্রম ভবনের ছাদে করা হয়েছে বিয়ের প্যান্ডেল।
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারেই ফাতেমার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মী মিরাজের শুভ বিবাহ শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান লিটন সমাদ্দার বলেন, লালমাটিয়া থেকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে আনার পরে আশ্রমের কর্মীরা সেবা শুশ্রূষা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলে। পরবর্তীতে মিরাজ ও ফাতেমা দুজন দুজনকে পছন্দ করে- বিষয়টি জানতে পেরে তাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের দায়িত্বে বিয়ের সকল আয়োজন করা হয়।
এমনকি, বর ও কনের জন্য আশ্রমের পক্ষ থেকে জমি কিনে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
পাশাপাশি পরিচয়হীন ফাতেমাকে সুস্থ জীবনের সঙ্গে একটি পরিবার উপহার দেওয়াটাও সমাজের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন লিটন সমাদ্দার।
নয়া শতাব্দী/জেএম/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ