গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। একটি আসনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের মধ্যে জাপার প্রার্থী ছিল ২৬৩ আসনে। এর মধ্যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়েছিল। সেসব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন না। এই ২৬টির মধ্যে জাপা জিতেছে ১১টি আসনে। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে তারা জয় পায়নি।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের ৯০ শতাংশই জামানত হারিয়েছেন। অবশ্য বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপার প্রার্থীদের বড় অংশের জামানত হারানো নতুন কিছু নয়। নবম থেকে একাদশ—এই তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছিল না, এমন আসনগুলোতে জাপার প্রার্থীদের ৮৬ শতাংশই জামানত হারান।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাপার ২৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ২৩৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। অর্থাৎ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৯০ শতাংশ প্রার্থী জামানত রক্ষা করার মতো ভোট পাননি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার সাতটি আসনেও জামানত হারিয়েছেন জাপার প্রার্থীরা। আসনগুলো হলো নীলফামারী-৩, রংপুর-১, বগুড়া-৩, পিরোজপুর-৩, ঢাকা-১৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও চট্টগ্রাম-৮। এসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জাপার প্রার্থীরা।
জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়। কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক–অষ্টমাংশের কম ভোট পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাপার যে ১১ জন জয়ী হয়েছেন, তাদের বাইরে মাত্র ১৬ জন জামানত রক্ষার মতো ভোট পেয়েছেন।
দলটির প্রার্থীদের ১৯৫ জন পাঁচ হাজারের কম ভোট পেয়েছেন। এর মধ্যে ৮৮ জনের ভোট এক হাজারের কম। তবে দলটির তিনজন প্রার্থী লক্ষাধিক ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সারা দেশে জাপার সব প্রার্থী মিলে পেয়েছেন ২১ লাখ ৬৮ হাজার ২২১ ভোট। যা মোট প্রদত্ত ভোটের ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
জাপার প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম ১২৪ ভোট পেয়েছেন সিলেট-৫ আসনে শাব্বীর আহমদ। চট্টগ্রাম-৩ আসনে এম এ ছালাম পেয়েছেন ১৩৫ ভোট, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে আবু জাফর মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ ১৬২ ভোট ও নরসিংদী-৩ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর পাঠান পেয়েছেন ১৮৯ ভোট। দলের ৯০ শতাংশ প্রার্থীর জামানত হারানোর কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক কাছে দাবি করেন, জাপার দুই শতাধিক প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অর্থ ও পেশিশক্তি এবং তাঁদের পক্ষে প্রশাসনিক সহায়তা থাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা টিকতে পারেননি। এ কারণেই ভোটের এমন ফল হয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাপার প্রার্থীদের বড় অংশকে জামানত হারাতে দেখা গেছে। ওই তিনটি নির্বাচনে যেসব আসনে জাপা জয় পেয়েছিল তার প্রায় সব কটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। এর বাইরে যে আসনগুলোতে জাপার প্রার্থী ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই জামানত হারিয়েছিলেন।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ