দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে পাওয়া ২৯৮টি আসনের ফলাফলে দেখা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৭ আসন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১০টি আসন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার ঢের বেশি। তারা জয় পেয়েছেন ৬০টি আসনে।
এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্যদিয়ে পঁচাত্তরের পর টানা চতুর্থ ও মোট পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন দলটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সেবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন দ্বিতীয়বারের মতো।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও টানা দ্বিতীয় ও মোট তিন মেয়াদে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সেই সরকারেও প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা সেই সরকারেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও টানা চতুর্থ মেয়াদে ও মোট পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে ২৯৯টি আসনে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। এ সময়ে কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্ন গোলযোগ হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ জায়গায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণেরও ঘটনা ঘটেছে। অনিয়মের কারণে সাতটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল করা হয় এবং জাল ভোটে সহায়তা করার জন্য ১৫ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারচুপি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৭ লাখ। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। ভোট হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৯৯ আসনে। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এবারের নির্বাচনে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৫৩৪ জন এবং স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন প্রার্থী ছিল আওয়ামী লীগের। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৫ জন প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী ছিল ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসা তৃণমূল বিএনপির।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৬০টি দল। দলগুলো সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে সফলতা না পেয়ে নির্বাচনের দুই মাস আগ থেকে হরতাল-অবরোধের পথ বেছে নেয়। এতে সরকারকে চাপে ফেলতে না পেরে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দেয় দলগুলো। পাশাপাশি সরকারকে সব ধরণের কর, খাজনা, পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল দেওয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় দলটি।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ