সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। বাড়িঘর হারিয়ে গৃহহীন হবেন উপকূলের দুই কোটি বাসিন্দা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পরিষদের ৪৮তম অধিবেশনে মঙ্গলবার উপস্থাপন করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গৃহহীনের সংখ্যা হবে প্রায় পাঁচ কোটি।
ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, পূর্বাভাস অনুযায়ী, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের সাগরতীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্থায়ীভাবে ডুবে যাবে। তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে বাস চার কোটি ৮০ লাখ মানুষের। এ ছাড়া প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় আট কোটিতে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে জানান, এরই মধ্যে গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়েছে মালদ্বীপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেশটির ৮০ শতাংশ ভূখণ্ডের উচ্চতা মাত্র এক মিটারেরও কম। সেখানে সমুদ্রের উচ্চতার সামান্য বৃদ্ধিতেও পরিস্থিতি জটিল রূপ নেবে।
ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয় সোমবার। প্রথম দিনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের কারণে সৃষ্ট মানবাধিকার সংকট নিয়ে কথা বলেন মিশেল।
তিনি জানান, পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি জীবন বাঁচানোর মতো মৌলিক অধিকার থেকেও মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
গত কয়েক মাসে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে (যেমন : সাইবেরিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া) নজিরবিহীন দাবানল, চীন, জার্মানি ও তুরস্কে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা, আর্কটিক অঞ্চলে তীব্র দাবদাহ ও বিষাক্ত মিথেন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া, মরক্কো, সেনেগাল আর সাইবেরিয়াতে তীব্র খরাসহ পরিবেশের বিরূপ আচরণের উদাহরণ তুলে ধরেন মিশেল। তিনি বলেন, ‘এসব কারণে প্রতিদিন বাস্তুচ্যুত হচ্ছে কোটি মানুষ; বাড়ছে ক্ষুধা, দুর্ভোগ।’
মিশেলের মতে, আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দীর্ঘ খরা থেকে হঠাৎ আকস্মিক বন্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক সম্পদ অধরা থেকে যাচ্ছে। সেখানে তরুণদের বেকারত্ব বাড়ছে; বাড়ছে অর্থনৈতিক অচলাবস্থাও। এর ফলে উদ্বাস্তুর সংখ্যা, সংঘাত, রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংস উগ্রবাদীদের বিস্তারও বাড়ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতে, সাহেল অঞ্চলজুড়ে এখনই গৃহহীন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকাতে। এসব অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকটও লক্ষণীয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ