ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
চুক্তিতে হোটেলে গিয়ে বেশি টাকা দাবি 

ভুল নম্বরের সূত্র ধরে শনাক্ত খুনি

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৪৫

আবাসিক হোটেলের রেজিস্ট্রারে নাম নিবন্ধনের সময় ইচ্ছে করেই ভুল মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছিলেন খোকন ভুঁইয়া। ১১ সংখ্যার ফোন নম্বরের স্থলে তিনি লেখেন প্রথম নয়টি নম্বর, তাও সঠিক নয়। পরে হোটেল কক্ষে এক নারীকে হত্যা করে তিনি পালিয়ে যান। এরপর নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখে চলে যান আত্মগোপনে। তার ধারণা ছিল এতে তাকে কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে শেষপর্যন্ত তার দেয়া ভুল নম্বরের সূত্র ধরেই প্রযুক্তিগত তদন্তে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা নয়া শতাব্দীকে বলেন, রাজধানীর শ্যামলী এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর এক নারীর হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়। এর ছায়াতদন্ত করছিল ডিবি। একপর্যায়ে হত্যায় জড়িত খোকনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, খোকন এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ নেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর তিনি মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে দু’জনে বিয়ার পান করেন। এরপর তিনি চলে আসেন ফার্মগেট এলাকায়। এখানে রাত ২টার দিকে ফার্মগেট ফুটওভারব্রিজের ওপর মোছা. আসমা ওরফে লিমা বেগম ওরফে কবিতা (২৫) নামের এক নারীর সঙ্গে তার কথা হয়। কবিতা তার সঙ্গে রাত কাটাতে সম্মত হলে দু’জনে চলে যান শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের ৪/১ নম্বর ভবনে অবস্থিত রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ষষ্ঠ তলার ৬০২ নম্বর কক্ষে ওঠেন। পরদিন ওই ঘরেই খাটের সঙ্গে ওড়না দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় কবিতার লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় দায়ের মামলার বাদী কবিতার স্বামী সজিব আলী শেখ জানান, পেশায় তিনি পান বিক্রেতা। পরিবার নিয়ে শেওড়াপাড়ার বর্ডার বাজার এলাকায় থাকেন। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে তার স্ত্রী ফার্মগেটে আসার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। রাত ১০টাতেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়। তখন তিনি জানতে পারেন, হোটেলে তার স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হোটেলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেন।

ডিবি সূত্র জানায়, হোটেলের রেজিস্ট্রারে খোকনের দেয়া অসম্পূর্ণ মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই শুরু হয় অনুসন্ধান। প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে ডিবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিন হাজার টাকার চুক্তিতে তার সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতে সম্মত হন কবিতা। সেখানে তারা অন্তরঙ্গ সময় কাটান। তবে পরে কবিতা ২০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। টাকা না পেলে চিৎকার করে সবাইকে বিষয়টি বলবেন বলেও হুমকি দেন। এ নিয়ে দু’জনের বাকবিত-া হয়। একপর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন খোকন। গতকাল সোমবার তাকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই সুকান্ত বিশ্বাস। এ সময় খোকন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ