বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১
সাড়ে ৩ বছর পর বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক আজ

চূড়ান্ত হবে আন্দোলনের রোডম্যাপ!

চূড়ান্ত হবে আন্দোলনের রোডম্যাপ!
প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:০৪

দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর দলের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে ধারাবাহিক এ বৈঠকে চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। বৈঠকে প্রাধান্য পাবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির ইস্যু। এ

কই সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদের মতামত নিতে চায় দল। সভা থেকে আগামী দিনের করণীয় চূড়ান্তে নেয়া হবে নেতাদের মত। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গেও বৈঠক করবে নীতিনির্ধারকরা। সবার মত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা। গতকাল সোমবার নয়া শতাব্দীকে এসব কথা জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, লন্ডন থেকে স্কাইপি বৈঠকে ভার্চুয়ালে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিসহ সংশ্লিষ্টরা চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সশরীরে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে এ বৈঠক শুরু হবে।

আজ মঙ্গলবার প্রথম বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যরা অংশ নেবেন। এরপর বুধবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকদের নিয়ে বসবে বিএনপি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। পর্যায়ক্রমে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেয়া হবে। এরপর ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদেরও মতামত নেয়া হবে। সবার মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে রাজপথে নামাসহ বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।

দলীয় সূত্রমতে, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস পরপর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করার বিধান রয়েছে। তবে চেয়ারপারসন চাইলে যে কোনো সময় এ সভা ডাকতে পারেন। সবশেষ খালেদা জিয়ার মামলায় রায় ঘোষণার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে হোটেল লা মেরিডিয়ানে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দি হওয়ার পর আর কোনো সভা ডাকা হয়নি। বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত তিনি। তবে মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এই বছর খালেদা জিয়া অনুপস্থিত থাকবেন।

জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সভা রাজধানীর কোনো হোটেল বা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ নেতা বলেন, সরকার তাতে অনুমতি দেবে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়রানি করতে পারে। তাই একদিনে না করে কয়েকদিন ধরে এ সভা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ই নিরাপদ। পরে এ সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে বৈঠকের দিনক্ষণ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসএমএসের মাধ্যমেও তাদের অবহিত করা হচ্ছে।

বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, নির্বাহী কমিটির বৈঠক সাধারণ কমিটির সবার উপস্থিতিতে বড় পরিসরে হয়ে থাকে। কিন্তু বড় কোনো স্থান না পাওয়ায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই এ সভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মূল এজেন্ডা থাকবে নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন আদায়ে আন্দোলন। সেই আন্দোলন কীভাবে কার্যকর রূপ নিতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপির মূল পরিকল্পনা হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে একই প্ল্যাটফর্মে সবাইকে আনা। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান চাই। তবে এর আগে নিরপেক্ষ সরকার চাই যাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ সমাধান হতে হবে। এজন্য দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। কাজটি এমনভাবে করতে হবে যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। বিগত দিনের মতো একতরফা হলে কেউ মেনে নেবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, গত শনিবারে বৈঠকে কমিটির সব নেতাই একমত হন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট প্রমাণ করে সরকারের অধীনে সুষ্ঠ ভোট সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় ঠিক করতে হবে। এ জন্য দলের সবার সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে হবে। সবার মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে দেব।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, আন্দোলন সফল করতে হলে সবার মতামত নেয়া ভালো। এতে সবাই মনে করবে সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনিও অংশীদার।

নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বলছেন, জিয়াউর রহমানের পরই বেগম খালেদা জিয়া শক্ত হাতে এই দলকে ধরে রেখেছেন, আগলে রেখেছেন নেতাকর্মীদের। তাকে ছাড়া নির্বাহী কমিটির বৈঠক চিন্তা করা যায় না। পরিস্থিতির কারণে তাকে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে পাবেন না নেতারা এটা খুবই দুঃখজনক। তবে দীর্ঘদিন পর নির্বাহী কমিটির বৈঠক হবে এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। মামলা, হামলা ও নির্যাতন মধ্যেও সবাই বসতে পারব। দলের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে পারব। এই বৈঠকে কাজ করার নতুন আশার সঞ্চার হবে।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাহী কমিটির বৈঠক আরো আগেই হতো। করোনা মহামারি এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দেরি হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি এই পুনর্মিলনের জন্য। ফোরামে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে, দিক-নির্দেশনা আসবে।

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের একদফা দাবি। নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন। এজন্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সর্বোপরি বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ম্যাডাম এই বৈঠকে থাকতে পারবেন নাÑ এটা শুধু আমার নয়, বিএনপির জন্যই খারাপ সংবাদ। এই নিয়ে নেতাকর্মীরা অত্যন্ত ব্যথিত। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে। কারণ, বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি বাইরে থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠবে; যা তারা ঠেকাতে পারবে না। তার মতে, দলের নেতারা যখন কর্মীদের ডাকেন তখন তারা উৎসাহিত হন। এই বৈঠকেও নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হবেন। দলের সাংগঠনিক কাজে গতি আসবে।

নির্বাহী কমিটির বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈঠকে নেতারা যে পরামর্শ দেবেন তার আলোকে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। তাদের মতামতের পর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এরপর তা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করে তাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।

তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে আমরা ইতোমধ্যে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে আমাদের আন্দোলন চলবে। দেশের জনগণ এ সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করে না। ইতোমধ্যে আমরা নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছি। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ