ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

একটি টেবিল ও দুটি চেয়ারের গল্প

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ
প্রকাশনার সময়: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৪

পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে বিশ্বের প্রথম এই ধরনের আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচিত অনুষ্ঠানটি একটি অস্থায়ী মঞ্চে মূলত একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ার দিয়ে সাজানো হয়েছিল।

যা এখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের একটি প্রধান নিদর্শন হিসেবে প্রদর্শনের জন্য জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে। অনেকের কাছেই এখনও অজানা রয়েছে যে কিভাবে মঞ্চটি তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছিল। যার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় বীর যোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সান্ত সিং।

সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমকে সান্ত সিং বলেন, আমাকে সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি কমান্ডার ঢাকা সেনানিবাসে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের সঙ্গে আলোচনায় আত্মসমর্পণ করতে রাজি হওয়ায় তাকে রেসকোর্সে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

সান্ত সিং আরও বলেন, তখন আমি ভেবে দেখলাম যে, ‘আত্মসমর্পণের দলিল’ স্বাক্ষর করার জন্য একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ারের প্রয়োজন হবে। তাই আমি জেনারেল নিয়াজীর অফিসে একটি উপযুক্ত টেবিল এবং চেয়ারের জন্য চারপাশে তাকালাম। তিনি বলেন, তারপর আমি টেবিলটি দেখলাম এবং দুটি চেয়ারসহ তা নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে ছুটে গেলাম।

সিং আরও বলেন, ‘রেসকোর্সের ময়দানে সাধারণ অস্থায়ী মঞ্চ স্থাপন করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত স্থান বেছে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাইনি আমি। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরপরই গোয়েন্দা প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিয়াজীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়েছিল আমাকে।’

সিং বলেন, সামরিক প্রয়োজন বা নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানের সৈন্যদের অবস্থান, তাদের পূর্বের পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সেই সন্ধ্যায় আমাদের তাকে (নিয়াজী) দীর্ঘ সময়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়েছিল। নিয়াজীকে ভারতীয় সেনারা তার বাসভবনে নিয়ে আসে এবং আমিও তার বাড়িতে (ক্যান্টনমেন্টে) গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমি ৩০ জন ভারতীয় সৈন্যকে বাড়িটি পাহারা দেওয়ার জন্য মোতায়েন করেছিলাম। আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, তিনি পালিয়ে যেতে পারেন কারণ আগের রাতে বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সামরিক অফিসার বার্মার ভেতর দিয়ে হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রবীণ এ জেনারেল জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা তার পোশাক, সাধারণ শিখ পাগড়ি ও দাঁড়ি এবং স্নেহময় মনোভাবের কারণে ‘ব্রিগেডিয়ার বাবাজি’ বলে ডাকতেন।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ