ফোনালাপ যখন মিডিয়ায় ফাঁস করা হয় তখন ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হয়। সামাজিকভাবে ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে কারা ফোনালাপ ফাঁস করে তা আমরা জানি না। তবে ফোনালাপ ফাস করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে সকল পক্ষকে সজাগ থাকা দরকার।
ফোনে আড়িপাতা ও ফোনালাপ ফাঁস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে দায়েরকৃত রিটের শুনানিকালে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এই মন্তব্য করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আগামী রবিবার এ রিটের উপর আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছে হাইকোর্ট।
এদিকে রিট আবেদন দায়েরের পূর্বে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে থাকেন সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিরা। নোটিশের জবাব না পেয়েই রিট মামলা করে থাকেন আইনজীবীরা। লিগ্যাল নোটিশের এই জবাব না দেওয়া প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছে, আমাদের দেশে ডিমান্ড নোটিশের জবাব দেওয়ার চর্চাটা সেভাবে গড়ে উঠেনি। হয়ত লাখে ২/১টা নোটিশের জবাব পেয়ে থাকতে পারেন কেউ কেউ। আদালত বলেন, আমরা যতই জনবান্ধব প্রশাসনের কথা বলি না কেন? প্রশাসনের এই দৃষ্টিভঙ্গি বা সংস্কৃতি কবে বদলাবে কে জানে।
ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা তদন্ত চেয়ে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের দশ আইনজীবী। লিগ্যাল নোটিশের জবাব না পেয়েই এ রিট করা হয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা বিটিআরসির দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই ধরণের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশন তার দায়িত্ব পালন করছে না। তিনি বলেন, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমি, আপনারা বা অ্যাটর্নি জেনারেল কেউ নিরাপদ নই। কখন কার ফোনালাপ কিভাবে ফাঁস হবে কেউ জানি না। স্বামী-স্ত্রী ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রতিরোধে বিটিআরসির কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা রিট আবেদনকারী হিসাবে রয়েছেন তাদের কারোর ক্ষেত্রেই ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। ফলে তারা কিভাবে সংক্ষুদ্ধ হলেন? যেসব ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা এখানে যুক্ত করা হয়েছে তারা চাইলে বিটিআরসিতে আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারেন। এছাড়া নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলা করারও সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে। অতএব এই রিট চলতে পারে না। খারিজযোগ্য। তিনি বলেন, যখন দুইজন ব্যক্তির মধ্যে ফোনালাপ হয় তখন এদের যে কেউ একজন সেটা রেকর্ড করে ফাঁস করতে পারেন। এখানে বিটিআরসির কি করার আছে? সেক্ষেত্রে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করতে পারেন। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এই ফোনালাপ ফাঁস প্রতিরোধ করা সম্ভব কিনা? শিশির মনির বলেন, সম্ভব। ডিজিটালি সারাবিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নাই। আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু জবাব না পেয়ে রিট করেছি। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রবিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ