ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তৃণমূলে সওয়ার বিএনপি!

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০০ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০৩

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘাত সংঘর্ষের পরবর্তী পরিস্থিতিতে নতুন ছকে এগোচ্ছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মামলা, গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরাসরি নির্দেশনা যাচ্ছে তাদের কাছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

এ কারণে কেন্দ্রীয় অনেক নেতা গ্রেপ্তার হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা-উপজেলার নেতাদের কেউ গ্রেপ্তার হলে তার জায়গায় দ্রুত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে যাতে আন্দোলন কর্মসূচিতে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা না হয়। মহানগর ও জেলায় কমর্সূচি সফল করতে পিকেটিং দায়িত্ব ভাগ করে একগোচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলটির শীর্ষ ও তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, সরকার একদফা নির্বাচনের পথেই হাঁটছে ধরে নিয়ে বিএনপি আরও হার্ডলাইনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। গ্রেপ্তার আতঙ্ক মাঠ নিয়েই বিএনপি কৌশলে মাঠে থাকার চেষ্টা করছে। নেতাকর্মীরা সবাই মাঠে নেমে আসছে ধীরে ধীরে। ঘরেও নিস্তার দিচ্ছে না পুলিশ। বেছে বেছে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে মাঠে নামা— সবকিছুই কৌশলে করছেন তারা।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, বার্তা একটাই— যে কোনো মূল্যে মাঠে পড়ে থাকতে হবে। ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ মাঠ দখলে নিয়ে নেবে। আমাদের এখন ডু অর ডাই সিচুয়েশন। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সব সময় পারাটা কঠিন। তবে সরকারের ওপর ক্রমেই দেশি বিদেশি চাপ বাড়ছে।

তৃণমূলের নেতা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং করতে আমাদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার এড়িয়ে কৌশলে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় ৬০-৬৫ জন নেতাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।

দলীয় সূত্রমতে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। অনেকের সঙ্গে এককভাবে কথা বলছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের বার্তা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পৌঁছে দিচ্ছেন। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাই মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি শরীফউদ্দিন জুয়েল বলেন, সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলেও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। তৃণমূলের ওপর দলের হাইকমান্ডের আস্থা রয়েছে। আন্দোলন টেনে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার নির্মম জুলুম-অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার-আটকও নির্বিচারে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কিন্তু জনরোষ আরও তীব্র হচ্ছে। মানুষের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা আরও আকাশচুম্বী হয়েছে। কাজেই সরকার যেটা ভেবেছিল যে, এ আন্দোলন বলপ্রয়োগ করে স্তব্ধ করে দেবে এবং নেতাদের বন্দি করে ফেললেই সবাই চুপচাপ ঘরে ফিরে যাবে, সেটা ইতোমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিকামী মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলতেই থাকবে যতক্ষণ না আমাদের একদফা দাবি অর্জিত হয়।

জেলায় জেলায় নতুন নেতৃত্ব: এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেপ্তার পরপরই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে আরেকজনকে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান কারাগারে থাকায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেপ্তারের পর লিটন মাহমুদকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করা হয়েছে। মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হককে গ্রেপ্তারের পর যুগ্ম আহ্বায়ক এজিএম শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে গ্রেপ্তার করার পর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়েছেন ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর।

নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তারের পর সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীকে গ্রেপ্তারের পর যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, সদস্য সচিব মাহফুজ উন-নবী ডন গ্রেপ্তার হওয়ায় সদস্য মো. আব্দুস সালামকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান গ্রেপ্তার হওয়ায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কারাগারে থাকায় সহসভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ