রাজধানীতে কোথাও গাড়ি দাঁড়ালেই দৌড়ে রসিদ নিয়ে হাজির হন টোল আদায়কারীরা। এতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে বিব্রত হতে হয়। বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের নাম ভাঙিয়ে রশিদ দিয়ে সিটি টোল আদায় করা হয়।
রাজধানীতে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কারা কীভাবে এসব টোল আদায় করছে সে সম্পর্কে পরিবহন মালিকদের কিছুই জানানো হতো না।
এ বিষয়ে গুলিস্তান, জয়কালী মন্দির, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় চলাচলকারী পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিল। এবার ১৬টি স্থান থেকে নিজেরাই টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসসিসি। এসব স্থানে ১৮ ধরনের পরিবহন থেকে টোল আদায় করবে সংস্থাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৮২ ধারা এবং চতুর্থ তফসিলের ৬নং ধারা অনুযায়ী ট্রাক থেকে দৈনিক টোল আদায়ের আইনগত সুযোগ রয়েছে।
এ লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়কগুলোর প্রধান প্রধান প্রবেশদ্বার চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এছাড়াও টোলের হার নির্ধারণের জন্য প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদকে আহ্বায়ক এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলকে সদস্য ও মহাব্যবস্থাপককে (পরিবহন) সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর ডিএসসিসির অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চতুর্থ সভায় এটি পাস হয়।
অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, ওই সভায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
মিনিবাস থেকে টোল আদায় করা হলেও নগরীতে ট্রাক পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে ডিএসসিসি টোল আদায় কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে ডিএসসিসি এ খাত থেকে প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ছাড়া পণ্যবোঝাই ট্রাক প্রবেশ ও চলাচল, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের মালামাল পরিবহন, ট্রাক থেকে বর্জ্য রাস্তায় রেখে দেয়া ইত্যাদি কারণে রাস্তা, মিডিয়ান, ফুটপাত ড্রেনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে রাস্তা ঘন ঘন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতেও রাজস্ব ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই ১৮ ধরনের যানবাহন থেকে ওজন অনুযায়ী ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, যেসব পরিবহন থেকে টোল নেয়া হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, সিমেন্ট মিক্সার ট্রাক, রড সরবরাহকারী ট্রাক, লো ফ্লাট বেডট্রাক, রাস্তা মেরামতের জন্য ট্রাক, ট্যাংক লরি, কন্টেইনারবাহী ট্রাক, হুইলার ট্রাক, প্রচলিত মালবহনকারী খোলা ট্রাক ও অন্যান্য ট্রাক থেকে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হবে। এছাড়া ডাম্পিং ট্রাক, ট্রাকটার, রেকার, ক্যাটারিং ট্রাক, ক্রেন ট্রাক ও ডেলিভারি ভ্যান হতে ১০ থেকে ৩০ টাকা নেয়া হবে। একইসঙ্গে পিকআপ ও ভ্যান থেকে ১০ টাকা করে টোল আদায় করবে সংস্থাটি।
ডিএসসিসির ১৬টি স্থান থেকে টোল আদায় করা হবে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-মগবাজার মোড় রেল ক্রসিং, শহীদ বাকী রোডের আবুল হোটেল মোড়, তিতাস রোডের নবীনগর মোড, বনশ্রীর সড়কের ‘ডি’ ব্লকের সামনে থেকে, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু, বেড়িবাঁধ (বছিলার কাছে), সাত মসজিদ রোড (ধানমন্ডি ২৭নং পশ্চিম মোড়), মিরপুর রোড (ধানমন্ডি ২৭নং রাস্তার পূর্ব মোড়), সার্ক ফোয়ারা, ত্রিমোহনী ব্রিজ, ফকিরখালী, সুলতানা কামাল ব্রিজ, শনির আখড়া ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন রাস্তায় টোল আদায় করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ