ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অবরোধের প্রভাব তিন সেতুর টোলে

প্রকাশনার সময়: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৯

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে মহাসড়কে গাড়ি কম চলায় দেশের অন্যতম তিন সেতুতে টোল আদায় কমে গেছে। রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের অবরোধ ঘোষণা করে। মাঝে শুক্র ও শনিবার দুই দিন বিরতি দিয়ে ৫ নভেম্বর থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ দেয়। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ৮ নভেম্বর থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি জামায়াত যা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলমান। এসব কর্মসূচির আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মূলত এ আতঙ্ক থেকে রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের পদ্মা সেতু, উত্তরবঙ্গ পথের বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুতে যানবাহন পারাপার কমে যায়। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ১০৫টি যান পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা।

সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে ১৬ হাজার ৭০৭টি যানবাহন চলাচল করে। এতে মোট টোল আদায় হয় ২ কোটি ১১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা। ২৬ অক্টোবর ২ কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫০ টাকা এবং ২৭ অক্টোবর ২ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা টোল আদায় হয়। কিন্তু ২৮ অক্টোবর থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল কমতে থাকে। এদিন ১১ হাজার ৪০২টি যানবাহন চলে। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা। হরতালের দিন ২৯ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে গাড়ি আরও কমে যায়। এদিন চলে ১০ হাজার ৩৫৬টি গাড়ি। আর টোল আদায় হয় ১ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ৩০ অক্টোবর কোনো হরতাল বা অবরোধ ছিল না। সেদিন পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল আবার বেড়ে যায়। ১৮ হাজার ৮১৯টি যানবাহন থেকে মোট টোল আদায় হয় ২ কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকা। এরপর ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয়া হয়; যা ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে মোট ৩২ হাজার ৫৫৪টি গাড়ি চলাচল করে। আর টোল আদায় হয় তিন কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন আদায় হয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৩ টাকা।

কিন্তু ৩ নভেম্বর ছিল শুক্রবার; ছুটির দিনে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। ফলে এদিন পদ্মা সেতু দিয়ে ২২ হাজার ৭০৬টি যানবাহন চলাচল করে। যা থেকে একদিনেই আদায় হয় ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭০০ টাকা। এ ধারাবাহিকতা ছিল পরের দিন শনিবার পদ্মা সেতুতে ২০ হাজার ২৩৪টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। ৫ নভেম্বর থেকে আবার অবরোধের ডাক দেয়া হলে পদ্মা সেতুতে যানবাহন কমতে থাকে। ১১ হাজার চারটি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৭০০ টাকা। প্রায় একই অবস্থা দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের ক্ষেত্রেও।

বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব পাভেল বলেন, শনিবার রাজনৈতিক দলের অবরোধ কর্মসূচি না থাকায় মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিন বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ১০ হাজার ৬৫৫টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ১ হাজার ৯৫০ টাকা। একই দিন সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ১১ হাজার ৫১টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৯৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা।

পক্ষান্তরে রোববার অবরোধ কর্মসূচি থাকায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ছন্দপতন ঘটে। এদিন সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ৭ হাজার ৯৪৫টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা। একই দিন সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬ হাজার ২টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। প্রকৌশলী পাভেল আরও বলেন, অবরোধ এবং সাধারণ দিনের মধ্যে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবধান ছিল ৭ হাজার ৭৫৯টি। আর টোল আদায়ের পরিমাণে ব্যবধান ছিল ৬৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকা।

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় জানায়, রোববার অবরোধ ছিল; ওইদিন মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল সংগ্রহ হয়েছে ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। যানবাহন অতিক্রম করেছে ২২ হাজার ৪৭২টি। তার আগের দিন শনিবার অবরোধ ছিল না; সেদিন ৪০ হাজার ১৫৪টি যানবাহন থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা টোল সংগ্রহ করা হয়েছে।

সওজের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে মেঘনা-গোমতী সেতুর এ টোল প্লাজায় (মেঘনা টোল প্লাজা) দৈনিক কোটি টাকার উপরে টোল সংগৃহীত হয়।’

সড়কে গাড়ি কম চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘অবরোধের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ পথে কিছু সংখ্যক বাস চলাচল করে থাকে। কিন্তু যাত্রী সংকট এবং নিরাপত্তার অভাবে দূরপাল্লার বাসগুলোর মালিকরা সড়কে বাস নামাতে চায় না।’ সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় অবরোধে দুষ্কৃতিকারীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এতে জানমালের নিরাপত্তা হুমকিতে থাকে। তাই অতি প্রয়োজন ছাড়া রাজধানী থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে রাজধানীতে মানুষ কম যাওয়া আসা করে।

নয়া শতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ