ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সোহরাওয়ার্দীর মহাসমাবেশে ‘হুঙ্কার’ ছড়ালেন চরমোনাই পীর 

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২২ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩২

বিরোধী দলসমূহের আন্দোলনে খানিকটা নীরবেই ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। উঠেছিল সরকারের সঙ্গে আঁতাত করার নানান অভিযোগ। এবার সেই নীরবতা ভেঙে সরকারকে পদত্যাগের হুঙ্কার দিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে সরকারকে পদত্যাগে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন। এ সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনরত দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ঘোষণা করছি।

১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করে এবং জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সব নিবন্ধিত ও প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব শীর্ষনেতাসহ আলেম ওলামাদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রেজাউল করিম বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না বলেই বিদেশি শক্তিগুলো এ দেশে প্রভাব দেখাতে আসছে। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আপনি বলেন আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে। ঐতিহাসিক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে আপনার আব্বা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। আজ ৩ নভেম্বর এই সরকারের মেয়াদ শেষ। এ জন্য আমরা আজকের তারিখে সমাবেশ করছি। পরিষ্কার ঘোষণা করছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে, জাতীয় সরকার গঠন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়েখ চরমোনাই বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এ দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা, সাম্য প্রতিষ্ঠা ও গরিবের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ক্ষমতায় থাকতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছে। গোটা দেশের মানুষ জেলখানায় আবদ্ধ। এদেশের মানুষের স্বাধীনতা নেই। এই জেলের তালা ভাঙতে হবে। কোনো ছলচাতুরী চলবে না। আমরা কারও বিরুদ্ধে নই। এই আন্দোলন যারা ভোট দিতে চায় তাদের জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ায় বিদেশি শক্তি নাক গলাচ্ছে। আপনি ব্যাকডোর দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে আমরা লড়াই করব। ফয়জুল করিম বলেন, আমরা রক্তপাত চাই না। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। অধিকার আদায়ের জন্য এ দেশের মানুষ স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আজকে সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মডেলের নির্বাচন বাংলাদেশে আর হতে দেয়া হবে না। দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে আমরা যাব না, জাতীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে।

দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। কাউকে ভাড়া করে আনা হয়নি। সবাই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পীর সাহেবের চরমোনাইয়ের নির্দেশনা পালন করেছে। আগামীতে পীর সাহেবের ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি আমরা পালন করব।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ সরকারকে দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনাদের অধীনে নির্বাচন তো দূরের কথা, আপনাদের আর এক মুহূর্তে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। যত দ্রুত ক্ষমতা থেকে যাবেন তত দ্রুত দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেননি। দেশের আইন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ গোটা দেশকে ধ্বংস করেছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা পদত্যাগ করেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন।

জাতীয় সরকারের রূপরেখা কেমন হবে— জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘জাতীয় সরকার হলো সর্বদলীয় সরকার। এ সরকার গঠিত হবে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে। যেখানে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। আর এ সরকারের প্রধান হবেন— সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রার্নিং একজন বিচারপতি।’ কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী সর্বদলীয় সরকার গঠন করলে তো নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে তো সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আপনারা সংবিধান পরিবর্তন চান কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধান তো আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র। এটা তো বাংলাদেশের সংবিধান না। সংবিধান তো পরিবর্তন করতেই হবে। কারণ সেই (সরকার) যে সংবিধান এ অবস্থা করছে—এইডা কি তার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল? সে ঝোপ বুঝে কোপ মারছে।’

তবে ইসলামী আন্দোলনের এই হুঙ্কার আর কর্মসূচি নিয়ে আপাতত ভাবছে না ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, আপাতত অবজার্ভ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘ওনারা যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিত তাহলে খুশি হতাম। সরকারকে আল্টিমেটাম না দিয়ে যদি বাইডেনকে কইত ১০ দিন সময় দিলাম। যদি ইসরায়েলকে কইত আমরা ফিলিস্তিনে আইতাছি তোগো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। যদি ১০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ না থামাস। তাইলে খুশি হইতাম। ইসলামিক দল, মুসলিম প্রধান দেশের নেতারা ওনারা— মুসলিম প্রধান দেশের ধর্মভিত্তিক নেতারা ফিলিস্তিন নিয়ে কিছু বলে না। তার মানে ওনারা মূল জায়গাতে যায় না। ওনারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে চায়। তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবেন কী করে আসবেন। এরকম আল্টিমেটাম দিয়া—বিএনপির মতো দল তাদের সঙ্গে আরও অনেক দল এমন তারিখ দিয়া ক্ষমতায় আইতেছে। আসলে যত গর্জায় তত বর্ষায় না। ওনারাও এরকম বলবে আমরা ধৈর্যের সঙ্গে শুনি, শুনব। ধৈর্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করছি। আমরা আগেও বলেছি— যত গর্জায় তত বর্ষায় না। যদি বা বর্ষায় তাহলে আমরা জনগণের মাথায় ছাতি ধরব। জনগণকে সেভ করার জন্য যা যা দরকার আমরা সব করব। গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ করলে ভালো। গণতান্ত্রিক রাইট আছে সভা সমাবেশ করার সেটা করছে। এখন আল্টিমেটাম দিছে। এখন দেখা যাক— আমরা ১০ তারিখে পদত্যাগ না করলে তারা কী করে। অগণতান্ত্রিক কিছু করলে সেখানে তারা সেই ফিডব্যাগই পাবে। যেভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অগণতান্ত্রিকভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় কিছু করতে গেলে তার জবাব রাষ্ট্র দেবে, সরকার জবাব দেবে এবং সরকারের দলের যারা আছে তারা সেটাকে প্রতিহত করবে। জনগণকে কোনো কষ্ট পাইতে দেবে না।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ