ঢাকা, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জুলহাজ-তনয় হত্যা: সেই জিয়া এখনো অধরা

প্রকাশনার সময়: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০৩

তিনটি মামলায় ফাঁসির রায় হয়েছে তার। সর্বশেষ আলোচিত জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলার রায়েও তাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত ৩১ আগস্ট এই রায় ঘোষণা করা হয়। আরো তিনটি হত্যা মামলার চার্জশিটেও নাম রয়েছে তার।

আলোচিত এই ব্যক্তি হলেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক কমান্ডার তিনি। প্রায় এক দশক ধরে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে আসছেন এই জিয়া। তাকে ধরতে সম্ভাব্য সব স্থানেই নজরদারি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ জিয়া এখন আমাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। তাকে গ্রেফতারের জন্য যত ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, সব পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তখন থেকেই সে পলাতক। প্রথম দিকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে তার যোগসূত্রের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সে জসিম উদ্দিন রাহমানীর মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর সংগঠনটি আনসার আল ইসলাম নামে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পরে সরকার আনসার আল ইসলামকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী এই সংগঠনটির বেশিরভাগ সদস্যই উচ্চশিক্ষিত এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ। জিয়া এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে সামরিক শাখার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ছাত্র ও কর্মজীবনে মেধাবী জিয়া তার সব মেধা কাজে লাগিয়ে আনসার আল ইসলামকে সুসংগঠিত করেছে। ২০১৩ সাল থেকে আনসার আল ইসলাম ‘টার্গেটেড কিলিং’ শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনায় জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল। এ কারণে অন্তত ছয়টি মামলায় তাকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড, প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ড, সমকামী অধিকারকর্মী ও ইউএসএইডের সাবেক কর্মী জুলজাহ-তনয় হত্যাকাণ্ড, প্রকাশক টুটুলকে হত্যাচেষ্টা মামলা, ব্লগার নিলাদ্রী নিলয়, নাজিম উদ্দিন সামাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে অন্যতম আসামি হিসেবে জিয়ার নাম রয়েছে। এর মধ্যে অভিজিৎ রায়, দীপন ও জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলার রায়ে আদালত তাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জিয়াকে ধরতে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও জিয়ার হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ইউনিট। তবে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের গ্রেফতারের পর জিয়ার বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। কিন্তু তার সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা যায়নি।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ তারা জিয়ার অবস্থান পেয়েছিলেন চট্টগ্রামে। এমনকি পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশেও তার যাতায়াতের কিছু তথ্য ছিল। কিন্তু তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। জিয়া তার সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও সব ধরনের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় বিশ্লেষণ করে যোগাযোগ রক্ষা করে। এছাড়া যোগাযোগের সময় বিশেষ কোড ব্যবহার করে। এজন্য আনসার আল ইসলামের কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি টের পেয়ে যায় জিয়া। এ কারণে আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে চলাফেরা করে সে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘জিয়াকে ধরতে আমরা নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তার সম্পর্কে যখন যে ধরনের গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা আপডেট করে তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়াও ম্যানুয়াল সোর্স ব্যবহার করেও তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ