ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কথা রাখেনি রাজউক!

প্রকাশনার সময়: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৯

প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকা শহরের পাশে গড়ে তোলা হবে নতুন শহর। নিশ্চিত করা হবে সব ধরনের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। আর এ লক্ষ্যেই ১৯৯৫ সালে ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতির সিকিভাগও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই পানি সরবরাহ কাজের। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৮ বছরেও নিশ্চিত হয়নি প্রকল্পের পানি সরবরাহ। আর তাই প্লট মালিকরা বলছেন, কথা রাখেনি রাজউক। তবে রাজউকের দাবি, প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি।

জানা যায়, ছয় হাজার ১৫০ একর জায়গা নিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন বলা হয়েছিল, ২০১৩ সালের জুনে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। ৩০টি সেক্টরে সেখানে ২৭ হাজার প্লটে আবাসিক ভবন গড়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু ২৮ বছরেও নাগরিক পরিষেবা না থাকায় প্রকল্প এলাকা এখনো বাসযোগ্য হয়নি। শুধু তা-ই নয়, এখন পর্যন্ত পাঁচবার প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। সাতবার বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে প্রথম ফেইজের অপারেশন চলমান আছে। এর আওতায় সেক্টর ১, ২, ৩ ও ৪-এ (আংশিক) পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ফেইজের কাজও চলছে। টাইমলাইন অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমগ্র পূর্বাচলে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। প্লট মালিকদের প্রশ্ন, ২৮ বছরে এসেও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি, তাহলে কবে এটি নিশ্চিত করা যাবে? প্রকল্পটি বাসযোগ্য করতে আর কত সময় নেবে রাজউক?

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড সাপ্লাই’ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটি চার ফেইজে বিভক্ত। প্রথম ফেইজের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে প্রথম ফেইজের অপারেশন চলমান। এর আওতায় সেক্টর- ১, ২, ৩ ও ৪-এ (আংশিক) পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ফেইজের নির্মাণ কাজও চলমান। টাইমলাইন অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমগ্র পূর্বাচলে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় দৈনিক ৩৪০ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় ৩২০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক স্থাপন, ১৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হবে। গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন ৩০ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর। এর মধ্যে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চার বছর কনস্ট্রাকশন এবং ২০২৪ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মোট ১১ বছর অপারেশন ও মেনটেইন্যান্সের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং প্রাইভেট পার্টনার হিসেবে ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার লিমিটেড বাকি ব্যয় ভার বহন করবে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকার ১ থেকে ৫ নম্বর সেক্টরে এবং জুন ২০২৫-এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব সেক্টরে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। রাজউকের সূত্র বলেছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এ প্রকল্পে চুক্তি অনুযায়ী প্রথম চার বছরে রাজউক বিনিয়োগ করছে ২৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাকিটা দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ডেলকট কোম্পানি। গ্রাহকসংখ্যা যা-ই থাকুক, প্রথম পর্যায়ে পানির সংযোগ শুরুর পর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর ঠিকাদারকে দিতে হবে ৫৭ কোটি টাকা। ১১ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে শুধু রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই প্রতিষ্ঠানটি পাবে সব মিলিয়ে ৬২৭ কোটি টাকা। অথচ এ সময়ে সেখানে পানি বিক্রি করে বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উঠে আসা অসম্ভব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘এ প্রকল্পে অসম চুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই। যখন চুক্তি হয়েছে, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এরপরও প্রকল্প পরিচালককে ডেকে আমি বিস্তারিত শুনে ব্যবস্থা নেব।’ সূত্র বলেছে, পূর্বাচল প্রকল্পে পানি সরবরাহের জন্য রাজউকের সঙ্গে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ইউনাইটেড ডেলকট কোম্পানির চুক্তি হয়। এটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। ডেলকট লিমিটেড বাংলাদেশি কোম্পানি এবং ইউনাইডেট ওয়াটার চীনভিত্তিক পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পের প্রথম বছরে ৪০ কিলোমিটার পানির পাইপলাইন এবং ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। রাজউক ঠিকাদারকে প্রথম বছরে ২৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার ৪ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেবে। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, রাজউকের দেয়া টাকাতেই প্রথম পর্যায়ের কাজ হয়ে গেছে। ৩টি গভীর নলকূপের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ কোটি টাকা এবং ৪০ কিলোমিটার পানির পাইপলাইনের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ কাজে ঠিকাদারের ৭৩ কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্ত থাকলেও তা লাগেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ডেলকট ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিনির্ভর ব্যবসা করে, তাদের পানি সরবরাহ কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ইউনাইটেড ওয়াটার ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। তাই এমন প্রতিষ্ঠানকে এত বড় কাজ দেয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তা উদ্বোধন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদারকে রাজউক ৫৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে ডেলকটের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ১১ বছরে এ জন্য ঠিকাদারকে দিতে হবে মোট ৬২৭ কোটি টাকা। রাজউকের সূত্র বলছে, এই রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ পূর্বাচলে পানি প্রকল্পে রাজউকের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৯২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। রাজউকের এ টাকা উঠে আসা অসম্ভব। লাভ হবে শুধু ঠিকাদারের। জানতে চাইলে ডেলকট লিমিটেডের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী তানভীর রায়হান বলেন, ‘পানি সরবরাহের প্রথম ফেজের কাজ শেষ করে আমরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত টাকা পেয়েছি। দ্বিতীয় ফেজের কাজ চলছে।’

১১ বছর পর প্রকল্প বন্ধ করতে হবে: পূর্বাচলের পানি সরবরাহ প্রকল্পের শুরু থেকেই পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। প্রকল্পটিতে এত গভীর নলকূপ বসানোর কারণে ভূমিকম্প ঝুঁকির আশঙ্কার কথাও উঠেছে। বিষয়টি রাজউকও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তাই এটি নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ১১ বছর পর ভূগর্ভস্থ পানির প্রকল্প বন্ধ করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী নয়া শতাব্দীকে বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পটি অনেকটা নিচু এলাকা। সেখানে ১০-১১ বছরের বেশি ভূগর্ভস্থ পানি কোনোভাবেই তোলা যাবে না। ওই সময়ের পরও পানি তোলা অব্যাহত রাখলে মাটি দেবে যেতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে পানির অন্য উৎসের খোঁজ করা হবে। পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. বদিউল আলম এসব বিষয়ে ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে রাজউক (অ্যানেক্স) ভবনে তার দপ্তরে গিয়ে পরিচয় দিলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে কথা বলা নিষেধ। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল হকেরও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করলেও রাজউকের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা ফোন ধরেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বাচলে প্লট নেয়া অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, খুব শখ করে পূর্বাচলে প্লট নিয়েছিলাম। এখনো বাড়ির কাজ শুরু করতে পারিনি। রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে কোনো সেবাই চালু করতে পারেনি। তাহলে কীভাবে আমরা সেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করব। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্লট নিলাম কিন্তু আমাদের কোনো মূল্যায়নই করল না রাজউক। তারা সেখানে জীবনযাপনের জন্য সেবা, পরিষেবা নিশ্চিত করতে পারেনি এখনো। সব এলাকায় পানির সংযোগ দেয়া হয়নি। কবে যে তারা এসব কাজ শেষ করবে, কে জানে? রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটে দেয়া পানির দাম তুলনা করে দেখা যায়, পূর্বাচলের বাসিন্দাদের আবাসিক শ্রেণিতে পানির দাম ৩১ শতাংশ ও বাণিজ্যিকে ৭ শতাংশ বাড়তি দেয়া লাগবে। অবশ্য রাজউক বলছে, ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করেই পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে পানির যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা ঢাকা ওয়াসার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। রাজউকের পানি সরবরাহ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। ঢাকা শহরের অন্যান্য এলাকায় একই পরিমাণ পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা নেয় ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম হবে ৪৫ টাকা, যা ঢাকা ওয়াসার চেয়ে ৩ টাকা বেশি। পানির দাম বেশি হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক মো. বদিউল আলম বলেন, সাত সদস্যের একটি কমিটি পানির দাম নির্ধারণ করেছে। পূর্বাচলে পানির সংযোগ এখন কম, সেই তুলনায় পরিচালন ব্যয় বেশি। এ বিবেচনায় ভর্তুকি মূল্যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পূর্বাচলে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বাইরের অবকাঠামোগত যে উন্নয়নের কথা ছিল, যেমন- সড়ক, অবকাঠামো, গ্যাস, পানিসহ সার্বিক ইউটিলিটি সার্ভিস, এগুলো হতে অনেক দেরি হওয়ায় পূর্বাচলের ডেভেলপমেন্ট পিছিয়ে গেছে। আসলে এত দীর্ঘ বছর পার হলেও প্রকল্পের পরিষেবাকেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো এখনো শেষ করতে না পারা সেখানকার প্লটমালিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্বাচলে হাউজিংয়ের যে চাহিদা তা মেটাতে গিয়ে রাজউক দেরি করে ফেলেছে। এর দায় পুরোটাই রাজউকের। এ সুযোগে আশপাশের বেসরকারি রিয়েল এস্টেট, আবাসন কোম্পানিগুলো তাদের প্রকল্পগুলো অনেক এগিয়ে নিয়েছে। এ ব্যর্থতার ভার রাজউককে নিতেই হবে।

সংযোগ না নিলেও দিতে হবে টাকা: রাজউকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাচল এলাকায় পানি সরবরাহ-সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলে পানির সংযোগ না নিলেও প্লটের মালিকদের ন্যূনতম একটি ফি দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ মেটানোর জন্য এটি করা হতে পারে বলে রাজউক সূত্র জানিয়েছে।

প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে মাঠে দুদক: পূর্বাচল প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন, প্লট বরাদ্দ, পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, মাটি ভরাট এবং রাস্তা ও ড্রেন প্রশস্তকরণসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের দুর্নীতিসংক্রান্ত অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। পূর্বাচল প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও পূর্বাচল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের তিন সদস্যের সমন্বয়ে অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। সম্প্রতি অনুসন্ধান কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া পূর্বাচল প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে রাজউক চেয়ারম্যানকে পাঠানো নোটিশে আট ধরনের নথিপত্র তলব করেছেন। এগুলো মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল প্রকল্পের ইছাপুর মৌজা এবং কামতা-হাড়ারবাড়ি-রঘুরামপুর মৌজার মাটি ভরাট সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। এসব কপি অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া উজ্জ্বল মল্লিক পূর্বাচল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে প্রকল্পের লেক, মাটি ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত নথিপত্র এবং প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরের লেক ভরাট সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পানি সরবরাহের জন্য বরাদ্দ ও ব্যয় সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র; প্রকল্পের লে-আউট কতবার সংশোধন করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রসহ বিস্তারিত তথ্য; রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে কতটি প্লট বরাদ্দ হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র; রাজউক থেকে প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার জনের মধ্যে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এদিকে নতুন এ শহরের প্রকল্প এলাকায় প্লট পাওয়া বেশির ভাগ মানুষই এখনো বাড়ি নির্মাণের চিন্তা করছেন না। কারণ, তাদের মতে, সেখানে বাড়ি করার উপযোগী পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বেশির ভাগ প্লটগ্রহীতার অভিযোগ, ন্যূনতম কোনো নাগরিক সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করেনি রাজউক। কবে সেখানে বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হবে, কবে নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন প্লট মালিকরা। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, নানা কারণে বিভিন্ন সময় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। তবে, সুখবর হলো, দীর্ঘ সময় কাজ বিলম্বিত হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি অগ্রগতির পথে। আশা করা যায়, এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এছাড়া সার্বিক অগ্রগতি দেখে নকশা অনুমোদনের সংখ্যাও এখন বাড়বে। অনুমান করা যায়, পূর্বাচলে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে নাগরিক সেবা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ