২০১৫ সালে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা একটি মামলায় খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই রায় দেন। বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করে রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, যাদেরকে এ মামলায় ভিকটিম বলা হয়েছে, তারা নিজেরা এ মামলা করেননি বা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কেউ এ মামলার বাদী নন। এমনকি তারা এ মামলায় সাক্ষীও ছিলেন না। মামলা করেছেন দূরের একজন, যার এ অভিযোগে মামলা করার এখতিয়ার-ই নেই।
এদিন রায় ঘোষণার আগে প্রবীর সিকদার আদালতে হাজির হন। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার বলেন, একাত্তরে আমার বাবার মরদেহ পাওয়া যায়নি। কাকা, দাদু, মামাদের আমাদের চোখের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য এই দেশটিকে বাবার কবর স্থান মনে করি। এই কবর স্থানের ওপর যারাই অসঙ্গতি করবে, অনিয়ম করবে, অন্যায় করবে তাদের প্রতি আমি প্রতিবাদ করে যাবো। আদালতের রায় আমার সাহস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ দেশটিকে লুটপাটের কারখানা হতে দেবো না। আমি একা হলেও এই প্রতিবাদ করে যাবো। ছয়টি বছর আমি লড়াই করে জিতেছি। কিন্তু আমার জীবন, আমার পারিবারিক জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে এনে ঢাকা শহরে খেতে হয়। কেউ আমাকে কাজ দেয় না। আমার নিজের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে ভয় পায়। এ রকম একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে রায়ে আমি দারুণ খুশি।
এর আগে চলতি বছরের ২২ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক। ওইদিন রায় ঘোষণা না করে বিচারক রায়ের জন্য ১১ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করেন। তবে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বিচারকাজ স্বাভাবিক হলে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তৎকালীন এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। এ ঘটনায় ছয় দিন পর ১৬ আগস্ট তার বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা স্বপন পাল।
২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মনির হোসেন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাত শামীম। এছাড়া আসামি পক্ষ মামলা পরিচালনা করেন আমিনুল গনি টিটু।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ