ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুই কিলোমিটারে দুই ঘণ্টাব্যাপী গণছিনতাই

প্রকাশনার সময়: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪২

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গণছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একদল ছিনতাইকারী এ ঘটনা ঘটান। স্থানীয় দোকানদার, পথচারী কেউ-ই বাদ যাননি সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হাত থেকে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় তারা অন্তত ২০টি দোকানের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছিনতাইয়ের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ নয়া শতাব্দীর হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। গ্রুপের প্রায় সবাই কিশোর। তাদের আনুমানিক বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। সবার হাতেই ছিল রামদা, ছুরি, চাপাতির মতো ধারালো বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। গ্রুপটিকে কখনো হেঁটে যেতে দেখা যায় আবার কখনো দৌড়ে। এ সময় সামনে যে পড়েছে তার কাছ থেকেই মোবাইল, নগদ টাকাসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসিলা গার্ডেন হাউজিং এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তারা বলছেন, নদীর পাড় ঘেঁষে ওয়াকওয়ে তৈরির পর ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই বিকাল হলেই ওয়াকওয়েতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ হাঁটতে বের হয়। এ সময় সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারীরা পথচারীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। তবে গত শুক্রবারের ঘটনা সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এরকম গণছিনতাই এর আগে কখনো দেখেননি স্থানীয়রা। ৪০ থেকে ৫০ জনের দলটির ছিনতাই শুরু হয় বসিলা বাজারের সামনে থেকে। আর শেষ হয় অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায়।

ঘটনার সময় অনেকেই তথ্য জানিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে থানাকে জানায়। তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঘটে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারী নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার পর রাত পৌনে ১২টা থেকে ১২টার দিকে টহল পুলিশের একটি গাড়ি আসে বলে জানান স্থানীয়রা। সরজমিন দেখা যায়, এলাকাজুড়ে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলার শিকার অনেক দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। হামলার শিকার বেশির ভাগই পথচারী ও ছুটির দিনে নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। বসিলা এলাকায় চায়না প্রজেক্টের ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন নিরব নামের এক ব্যক্তি। কথা হলে তিনি বলেন, কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় আমরা তিনজন খাওয়ার জন্য নিচে নামি। এ সময় দেখি দেশীয় অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ দৌড়ে আসছে। দৌড় দিলে আমাদের আক্রমণ করতে পারে এই ভেবে আমরা দৌড় না দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তবে তাতেও রক্ষা হয়নি। তারা এসেই প্রথমে আমাদের মোবাইলে হাত দেয়। তখন আমরা তাদের বলি, ভাই আমরা কাজ করতে এসেছি। আমাদের মোবাইল নিয়েন না। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথাই শুনেনি। এরপর আমি হাঁটতে নিলেই আমার মাথায় রামদা দিয়ে কোপ মারে। আমার মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। না দিতে চাওয়ায় আমাকে মারধর করেছে। এরপর মারধর করে মোবাইলসহ সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।’ জানতে চাইলে স্থানীয় এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘গ্রুপটিতে ৪০ থেকে ৫০ জন লোক ছিল। তারা সামনে যাকে পেয়েছে তারই সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। ভয়ে কেউ বাধা দিতে আসেনি।’ আরেক মুদি দোকানদার বলেন, ‘ছিনতাইকারী গ্রুপটি প্রায় ২০টি মুদি দোকানে ছিনতাই করেছে। দোকানে থাকা নগদ টাকা এবং মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে এখনো অনেকে দোকান খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না।

শুক্রবার ছুটির দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নুসরাত আফরিন। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত শুক্রবার আমি বাসার পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে যাই। হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। গলায় অস্ত্র ধরে বলে মোবাইল আর টাকা দিতে। পরে একজন আমার ব্যাগ খুলে মোবাইল নিয়ে যায়। কিন্তু টাকা না থাকায় আমার শরীরের তল্লাশি করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আমার পা ও পিঠে অনেকগুলো আঘাত করে। মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পর একজন এসে লক খুলে দিতে বলে। তখন আমি দৌড় দিলে আমার কপালে ও হাতে কোপ দেয়। এখন থানায় এসেছি অভিযোগ দিতে। পুলিশের সহযোগিতা পাননি উল্লেখ করে আফরিন বলেন, থানায় এসে ঘটনা খুলে বলার পরেও আমাকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখে। পরে একটা কাগজে অভিযোগ লিখে নেয়। কিন্তু সেটা জিডি না অভিযোগ আমি বুঝতে পারছি না। আরেক দোকানি আরিফুর রহমান বলেন, আমার দোকানের ক্যাশ বক্স থেকে সাত হাজার নগদ, এক কেস পানির বোতলসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমার ক্ষতি অন্তত ১২ হাজার টাকা। অস্ত্রের মুখে দোকানে সামনে বসা এক কাস্টমার ও আমার ভাগ্নের মোবাইল মানিব্যাগ নিয়ে গেছে।

গণছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘আসলে দুই ঘণ্টাব্যাপী ছিনতাই না বিষয়টা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি, দুইটা গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। একটা গ্রুপ আরেকটা গ্রুপের লোকজনকে মারতে গেয়েছিল। যাকে মারতে গেছে তাকে পায়নি। পরে ফেরার সময় ওরা ছিনতাই করেছে। আমরা চারজন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করেছি এখন পর্যন্ত যাদের কারও কাছ থেকে মোবাইল আবার কারও কাছ থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে। আর যে এলাকায় ঘটনাটা ঘটেছে সেটা রাত ৭-৮টার দিকে অনেকটা নির্জন এলাকা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ