বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে অমাবস্যা ও পুবের মাঝারি ধরনের দমকা ঝড়ো হাওয়ায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা বন্দরসহ উপকূলজুড়ে অস্বাভাবিক জোয়ার বইছে। এতে অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
এছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, কুড়িগ্রামে বন্যায় ২৭ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে, টাঙ্গাইলে যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ও মানিকগঞ্জে এক লাখ ২০ হাজার ৭১৫ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পটুয়াখালী : লঘুচাপের প্রভাবে অমাবস্যা ও পুবের মাঝারি ধরনের দমকা ঝড়ো হাওয়ায় কলাপাড়ার পায়রা বন্দরসহ উপকূলজুড়ে অস্বাভাবিক জোয়ার বইছে। বেড়িবাঁধ ভাঙা জনপদ রাবনাবাদ পাড়ের দীর্ঘ ১২ কিলোমিটারজুড়ে জোয়ারের পানিতে থৈ থৈ করছে। হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষের রান্নার চুলা থেকে টয়লেট সব পানিতে ডুবে গেছে।
সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পানিবন্দিদশার কোনো উন্নতি হয়নি। বিপর্যস্ত দশায় পড়েছে অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন লালুয়ার ১১ ও ধানখালী, চম্পাপুর ইউনিয়নের নয় গ্রামের মানুষ।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানান, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সাগর বেশ উত্তাল রয়েছে।
উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আবহাওয়া অফিস থেকে পায়রা বন্দরকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মাছ ধরার ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
নোয়াখালী : হাতিয়ায় পূর্ণিমা তিথির প্রভাবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা। সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া জোয়ারে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি ৩-৪ ফুট বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে হাতিয়া উপজেলার সুখচর, নলচিরা, চরঈশ্বর, চর কিং, হরনী, চানন্দী, নিঝুম দ্বীপ, জাহাজমারা, বুড়ির চর, সোনাদিয়া ও তমরদ্দি ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, পূর্ণিমা তিথির প্রভাবে জোয়ারের কারণে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় পানি উঠেছে।
কুড়িগ্রাম : বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলি আবাদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার অববাহিকার কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বন্যায় জেলায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ২৮৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি খেত ও বীজতলা ১৫৫ হেক্টর। তবে কৃষি বিভাগ পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারিনি।
মঙ্গলবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখন বিপদসীমার নিজ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মন্জুরুল হক জানান, কুড়িগ্রামে এবার বন্যায় রোপা আমন, সবজি ও বীজতলা মিলে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর বিভিন্ন ফসল ১৬ থেকে ১৭ দিন পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
টাঙ্গাইল : যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন। তবে এখনো কালিহাতী, ভূঞাপুর, নাগরপুর, বাসাইল ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া বংশাই নদীর পানি ১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, বন্যায় ৯৮০ হেক্টর রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি নেমে গেলে নিমজ্জিত ৫০ ভাগ রোপা আমনের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।
মানিকগঞ্জ : শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার চার উপজেলার ২৮ ইউনিয়নের এক লাখ ২০ হাজার ৭১৫ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
জানা গেছে, জেলার দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর ও সাটুরিয়া উপজেলার আংশিক এলাকায় ২৪ হাজার ১৪৩টি পরিবারের এক লাখ ২০ হাজার ৭১৫ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পানিবন্দি মানুষের মাঝে ৭ দশমিক ২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ