বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে একের পর এক ঘটছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সীমান্তে হত্যা শূন্যতে নামিয়ে আনা আর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে দুই দেশের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকবার সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার চলছে। কারণে-অকারণেই চালানো হয় মারণাস্ত্র। গুলি করে বা ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় নিরীহ বাংলাদেশিদের।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “দুই দেশের সরকারের নানা বৈঠকে সীমান্তে হত্যা জিরোতে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আমরা দেখেছি। কিন্তু সেটার ব্যত্যয় সব সময়েই ঘটছে, যা উদ্বেগজনক।”
তিনি বলেন, “সীমান্তে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের পর্যন্ত এই প্রতিশ্রুতিগুলোর বার্তা যায় কি-না, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। নাকি এটা মিটিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে?”
গোস্বামী বলেন, দারিদ্র বা ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে মানুষ অনেক সময় সীমান্ত পারাপারের চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে তাদের গুলি করে হত্যা না করে সহনশীল আচরণের মাধ্যমে তাদের বিরত করা উচিত।
তাঁর মতে, সেটা নির্ভর করে সীমান্তে যারা দায়িত্বরত রয়েছেন, তারা কেমন আচরণ করেন - তার ওপর।
তিনি আরও বলেন, “সরকারের উচ্চপর্যায়ে কাগজে-কলমে মিটিংয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেটাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার, দুই পক্ষ থেকে যদি সেটা করা হতো, তাহলে সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা আর ঘটতো না।”
সম্প্রতি সীমান্তে যেসব হত্যাকাণ্ড
গত শনিবার কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা সীমান্তে একজন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী-বিএসএফ।
ক’দিন আগে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফ দুই বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে।
গত ১৪ জুলাই একই জেলার লোহাকুচি সীমান্তে আরেক বাংলাদেশি বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়।
বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে বিপদজনক সীমান্ত হিসেবে মনে করা হয়। এর কারণ, বিএসএফ’র বেপরোয়া আচরণ ও ভূমিকা।
বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার : মোমেন
এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, সীমান্তে হত্যা বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার। লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। আজ সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা ‘বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার’।
মন্ত্রী পর্যায়েও বৈঠক: হয়নি সমাধান
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে।
সীমান্তে হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে। সেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করতে একমত হয় দুই দেশ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি সীমান্তে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ