নতুন পাসপোর্ট করতে গেলে প্রতি চারজনের তিনজনকেই ঘুষ দিতে হয়। আর দুর্নীতির ঘটনায় ব্যবস্থা নেবে যে সংস্থা, সেই পুলিশই ঘুষ নিয়ে থাকে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে। পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে ৪১.৭ শতাংশ দালালদের সহযোগিতা নিচ্ছে। দালালদের সঙ্গে এসবি পুলিশ ও পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা টিআইবির এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং পাসপোর্ট সেবায় প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং পুলিশি তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় দালালদের দৌরাত্ম্য আরো ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
এদিকে, শুধু পাসপোর্ট অফিসেই নয় সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিআরটিএসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মমাফিক সেবা পাওয়া দুরূহ সেখানেই দালালচক্র গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুলসংখ্যক দালাল গ্রেফতার করে জেল-জরিমানা করা হলেও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বরং সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো দালালদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, অফিসের ভেতরে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই দালালরা সুযোগ পাচ্ছে। ভেতর থেকে কারা প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটাকে আগে চিহ্নিত ও দমন করতে হবে। দালালদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অফিসের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করি না।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলেও এমন ধারণার প্রমাণ মিলেছে। মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রাইভেট কারের ফিটনেস নবায়ন করাতে আসা প্রকৌশলী মৌসুমী ইসলাম জানান, গত বুধবার দেড় ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েও তিনি কাক্সিক্ষত সেবা গ্রহণ করতে পারেননি। অথচ পরদিনই দালালদের মাধ্যমে মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যে গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করাতে পেরেছেন।
মৌসুমী ইসলামের ভাষ্য, দালালরা পার্টির কাছ থেকে উৎকোচ নিতে পারেন। কিন্তু ফাইলে তো অফিসারদেরই সই করতে হয়। দালালদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ না থাকলে এ কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা জামাল উদ্দিন জানান, তার এক নিকটাত্মীয়ের জন্য দুই দিন ঘুরে আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করাতে না পারলেও দালালদের মাধ্যমে তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলে যায়।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, সরকারি অফিস ও বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাক্সিক্ষত সেবা পেলে দালালদের নৈরাজ্য কমবে। দালালবিরোধী অভিযানের চেয়ে অফিসের ভেতরে বসে যারা তাদের সহায়তা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।
সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস ও বিআরটিএ কার্যালয়ের দালালদের গ্রেফতারে সারাদেশে একযোগে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রোববার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ