কুড়িগ্রামে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া রাজবাড়ীতে বন্যায় ৩০হাজার মানুষ পানিবন্দি, ময়মনসিংহে পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্কে ধোবাউড়ার দেড় শতাধিক পরিবার, টাঙ্গাইলে বন্যায় ৭৯০ হেক্টর আমনের জমি নিমজ্জিত, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে, রংপুরে তিস্তা ও ঘাঘট গ্রাস করছে গঙ্গাচড়ার জনপদ ও ফরিদপুরের পদ্মা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম : ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে করে এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার অববাহিকায় জেগে ওঠা নতুন চরে বসত গড়া মানুষ। ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে এসব চরের মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের সংকট। দীর্ঘ সময় পানিতে অবস্থান করায় হাতে পায়ে ঘাসহ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে।
সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাডোবার চরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরের অর্ধেক পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে।
রাজবাড়ী : পদ্মার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে ১৩টি ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলে বসবাসকারী অধিবাসীদের বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর কাঠুরি, চর মৌকুড়ি, চর আম্বারিয়া, মালিকান্দা চর সিলিমপুর এলাকায় তিন শতাধিক বাড়িঘর ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে। কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া, কালিকাপুর ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া, সাদারচর, প্রভৃতি এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পাংশা ও গোয়ালন্দ উপজেলার অন্ততপক্ষে ১৫টি গ্রামের মানুষ সহায়-সম্পদ হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
ময়মনসিংহ : ভারত থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে নিতাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ঘোষগাঁও ইউনিয়নে বন্যার প্রকোপ তেমন না থাকলেও পাহাড়ি ঢলে জিগাতলা গ্রামের নিতাই নদী পাড়ের দেড় শতাধিক পরিবার এখন ভাঙন আতঙ্কে। কারণ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বেড়িবাঁধ ভাঙন।
বেড়িবাঁধ ভেঙে অকাল বন্যায় বাড়িঘরসহ সদ্য রোপিত জমির ফসল ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় দিন পার করছে জিগাতলা গ্রামের নদীপাড়ের দেড় শতাধিক পরিবার। কিন্তু নজরে আসছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের।
টাঙ্গাইল : যমুনার পানি অপরিবর্তিত থাকলেও ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, বাসাইল ও নাগরপুর উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি অপরিবর্তিত থেকে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি ৪ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার ৮৯ হাজার হেক্টর রোপা আমন লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে এবারের বন্যায় ৭৯০ হেক্টর রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জামালপুর : বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ দুর্ভোগে আছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকট।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ১৬৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। ২২ হাজার ৯৩৪টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আট হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
রংপুর : তিস্তাকে বলা হয় পাগলা নদী। বছরের বেশির ভাগ সময়ে এ নদীর বুক থাকে পানিশূন্য। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তিস্তার গতিমতি বদলে যায়। উজানের ঢলে যৌবন ফিরে পাওয়া নদী হয়ে ওঠে রাক্ষুসে। দীর্ঘ সময় পানিশূন্যতায় থাকার আক্ষেপ মেটাতে ভাঙতে থাকে নদীর দু’কূল।
প্রতিদিন ভাঙনখেলায় তিস্তার পরিধি বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি। এবারও বদলায়নি এ নদীর স্বভাবসুলভ আচরণ। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, দফায় দফায় উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা এখন জলভরা।
তিস্তায় কখনো পানি বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তাতীরবর্তী ভাঙনকবলিত মানুষজন। অব্যাহত নদীভাঙনে বদলে যাচ্ছে সেখানকার কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মানচিত্র। তিস্তার সঙ্গে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে ঘাঘট নদেও।
ফরিদপুর : পদ্মা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার সকাল পর্যন্ত গোয়ালন্দ পয়েন্টে এ দৃশ্য দেখা যায়। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এদিকে ওই এলাকায় ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ১৪১টি বসতভিটা। এ ছাড়া দুই একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।
জানা গেছে, জেলার আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে টগরবন্দ, গোপালপুর ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন।
টগরবন্দের চাপুলিয়া, আজমপুর, চর আজমপুর ও চরডাঙ্গা, গোপালপুর, দিকনগর, কাতলাসুর ও খোলাবাড়িয়া, পাচুড়িয়ার বাঁশতলা, পাচুরিয়া ও চাঁদরা গ্রামগুলোয় ভাঙনের অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ