ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অব্যবহৃত ডাটা ফেরতের নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৫১ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৫৯

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেয়ার বিষয়ে নির্দেশনার এক মাস পার হলেও সুবিধা পাচ্ছেন না মোবাইল গ্রাহকরা। বিষয়টি এখনো নিদের্শনার মধ্যেই ঝুলে আছে। বিটিআরসি বলছে, মোবাইল ডাটা ফেরত দেয়া নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কমিটি গঠন করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে ডাটা ফেরত দেয়ার জন্য। তবে মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি, শর্তসাপেক্ষে ডাটা ফেরত দেয়া হচ্ছে। যদিও গ্রাহকরা বলছেন, শর্তের মারপ্যাঁচে তারা পাচ্ছেন না সুফল।

জানা যায়, গত মাসের (আগস্ট) শুরুতে অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ কমপক্ষে সাত দিন করার জন্য বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতি নির্দেশনাও দেন মন্ত্রী। তবে প্রায় এক মাস অতিক্রম হলেও এখনো ডাটা ফেরত দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রীর নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিটিআরসি। ফলে, সুফল পাচ্ছে না মুঠোফোন গ্রাহকরা। মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছেন, বিটিআরসির বর্তমান নির্দেশনা মেনে এখন কিছু ডাটা ফেরত দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মানতে হবে দুইটি শর্ত। প্রথমটি হলো- যে প্যাকেজের ডাটা অব্যবহৃত রয়ে গেছে, সেই একই মেয়াদের প্যাকেজ পুনরায় কিনতে হবে। তা ওই প্যাকেজের মেয়াদের মধ্যেই ব্যবহার করতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো- বিদ্যমান প্যাকেজ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্যাকেজটি আবার কিনতে হবে। তবে ভিন্ন প্যাকেজ কিনলে ডাটা ফেরত পাওয়া যায় না। সব ডাটা ফেরত দেয়ার যে কথা হচ্ছে, তা নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে অপারেটরগুলো তা কার্যকর করবে। তবে এতে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিনা, তা বিটিআরসি খতিয়ে দেখবে। তবে বিষয়টিকে হাস্যকর ও প্রতারণা বলছে গ্রাহকরা। ডাটার মারপ্যাঁচ থেকে গ্রাহকদের রেহাই দিতে অপারেটর ও বিটিআরসির প্রতি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তৌহিদুল আহমেদ। অফিস ও বাসায় রয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে অনলাইনে দিনের বেশিরভাগ অফিসের বিভিন্ন ভার্চুয়াল গ্রুপে যুক্ত থাকতে হয় তাকে। শুধু এ কারণে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। মোবাইল অপারেটর থেকে ৪ দিনের জন্য ১ জিবি ডাটা ৩৬ টাকায় নেন তিনি। মোবাইল ডাটা শুধু যাতায়াতের সময়ে সামান্য ব্যবহার করা হয় আরিফুরের। এতে ৩০০ মেগাবাইট ডাটাও শেষ হয় না। কিন্তু চার দিন পর আবার রিচার্জে কখনো আগের ডাটা ফেরত পান না। তিনি বলেন, আমার টাকায় কেনা ডাটা আমি আবার ফেরত পাব না কেন? আমি তো ইন্টারনেট নিচ্ছি একই অপারেটর থেকে। যে প্যাকেজই কিনি না কেন, পরেরবারের প্যাকেজে আমার ডাটা আমাকে ফেরত দেয়াই তো ন্যায়বিচার।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোবাইল অপারেটররা ডাটা নিয়ে যা করছে, তা এক ধরনের প্রতারণা। তাদের কথামতো আমাদের ডাটা ব্যবহার করতে ক্যালেন্ডার বা ডায়েরি মেনটেইন করতে হবে। তাতে দাগ দিয়ে রাখতে হবে, আমি কোন প্যাকেজ কবে কিনলাম, মেয়াদ শেষ হবে কবে। এটা হাস্যকর। এ বিষয়ে বিটিআরসির পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এসব বিষয় আমরা বিটিআরসির গত গণশুনানিতেও উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বিষয়গুলোর কোনো উত্তর বা সমাধান পাইনি। তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে ঘরে বসে থাকা আয়-রোজগারহীন গ্রাহকের অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে ইন্টারনেট ডাটা ও টকটাইমের মারপ্যাঁচ বন্ধ করতে হবে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, গ্রাহকদের অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরত দেয়া নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে। আমরা অপারেটরদের কিছু নির্দেশনাও দিয়েছি ডাটা ফেরত দেয়ার জন্য। হয়তো সম্পূর্ণ কাজ হচ্ছে না, তবে কিছু কাজ হচ্ছে। অনেকে ফেরত দিচ্ছে, অনেকে হয়তো দিতে পারেনি। তবে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। অপারেটরদের কাছে ছক আকারে তথ্য চেয়েছি, কিছু পেয়েছিও। আমরা বিষয়টি স্টাডি করছি। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, অপারেটরগুলোকে অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দিতেই হবে। এ নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে। মোবাইল অপারেটরগুলো আগে এই ডাটা ফেরত দিত। আমি নিজেও এই ডাটা ফেরত পেয়েছি। কিন্তু এখন তারা কেন দেয় না, তাদের কাছে এই প্রশ্নটা আমারও। কলড্রপ হলেও তার ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু এখন তা পাওয়া যাবে না কেন?

তিনি বলেন, গ্রাহকরা যাতে তাদের কেনা ডাটা প্রয়োজন অনুসারে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায়, সে কারণে ডাটা প্যাকেজগুলোর মেয়াদ কমপক্ষে সাত দিন করারও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখনো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। যেসব অপারেটর সাত দিনের কম মেয়াদে ডাটা প্যাকেজ বিক্রি করছে তাদেরও জবাবদিহির সম্মুখীন করা হবে। সংক্ষিপ্ত ও আজেবাজে মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করতে হবে। তাদের কলড্রপের টাকাও ফেরত দিতে হবে। এটা যুক্তিসঙ্গতভাবে ভোক্তার অধিকার। সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। একচেটিয়াভাবে প্রফিট করার জন্য কাউকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি।

মোস্তফা জব্বার আরো বলেন, টাকা দিয়ে ডাটা বা টকটাইম কেনার পরে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম পরবর্তী রিচার্জের সময় পাওয়া যাচ্ছে না কেন? হিসাবটা খুবই সহজ; উত্তর খুবই সহজ। অব্যবহৃত এমবি দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ তৈরি করে পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে।

নয়া শতাব্দী/এমএইচআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ