ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

হলি আর্টিজান হামলার ৭ বছর : সেদিন যা ঘটেছিল

প্রকাশনার সময়: ০১ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৪
ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সাত বছর আগের এই দিনে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলায় পুলিশের ২ সদস্যসহ দেশি-বিদেশি ২০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, তিনজন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয় ছিলেন। হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা যে নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যা করে, তাতে স্তম্ভিত হয়েছিল পুরো জাতি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সেদিন রাত পৌনে নয়টায় হঠাৎ করে হলি আর্টিজান বেকারিতে গোলাগুলি শুরু হয়। বেকারিটিতে আসা নাগরিকরা দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন ২২ জন।

এই হামলা শুরুর পরপরই গুলশান বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওয়ারলেসে বার্তা চলে যায় এবং পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন গুলশান থানার ওসি সালাউদ্দিন ও এসি রবিউল ইসলাম। ভেতরে তখন থমথমে অবস্থা। পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় মাটিতে লুকিয়ে পড়েন ওসি সালাউদ্দিন ও এসি রবিউল। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা মারা যান।

সে সময় দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ খবর পাওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছেন র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে পৌঁছে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের দেখা মাত্র জঙ্গিরা গুলি ছুটতে শুরু করে। কিন্তু ওই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো জঙ্গি হলি আর্টিজান বেকারি থেকে বের হতে পারেনি।

অন্যদিকে বেকারিতে আগত ব্যক্তিরা জিম্মি হয়ে পড়েন জঙ্গিদের কাছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রশাসনের সহায়তা চান। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশি সাধারণ জনগণ ছিলেন।

এরপর রাতভর চলতে থাকে জিম্মিদশা। হাজার চেষ্টা করেও জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে রাত দেড়টার দিকে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে হামলার দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

রাতভর চেষ্টা করেও সফল না হওয়ায় পর দিন ২ জুলাই সকালে শুরু হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে ১২ ঘণ্টার জিম্মিদশার অবসান ঘটায়। মাত্র ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’র পর জঙ্গিদের হাতে নিহত ২০ জনের মরদেহ বের করে নিয়ে আসা হয় হলি আর্টিজান থেকে। এদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানের, একজন ভারতের ও ৩ জন বাংলাদেশি।

অভিযানে সরাসরি হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। তারা হলেন, রোহান ইমতিয়াজ, সামিউল মোবাশ্বির, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ