সাভারের আশুলিয়ায় জয়নাল নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন মো. সাব্বির হোসেন (২২), মো. আনোয়ার হোসেন (২০) ও মো. সুরুজ আলী (১৮)। তারা বিদেশি সিরিয়াল দেখে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে এবং লাশ গুম করে।
মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আব্দুল মুত্তাকিম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ২৮ আগস্ট দুপুরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি বাসার গোসলখানার পানির ড্রাম থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ পচে কঙ্কাল হয়ে যাওযায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।
ওই চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। তার নাম জয়নাল। এরপরই হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সঙ্গে ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র্যাব-১ অধিনায়ক জানান, র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ঘটনাস্থলে সোর্স নিয়োগ করে। পরবর্তীতে সোর্সের মাধ্যমে বাসায় সচরাচর যাতায়াতকারী একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা জানতে পারে। পরে আশুলিয়ায় জয়নাল হত্যাকাণ্ডের ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের খুনের রহস্য বেরিয়ে আসে।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত সাব্বির আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। নিহত জয়নাল ও সাব্বির বন্ধু। সে সুবাধে সাব্বিরের ভাড়া বাসায় মে মাস থেকে সাবলেট হিসেবে থাকেন জয়নাল। একই বাসায় বসবাসের ফলে সাব্বিরের স্ত্রীর সঙ্গে জয়নালের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যা সাব্বির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হিসেবে সন্দেহ করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মনোমালিন্যের জের ধরে গত জুন মাসে সাব্বির তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেন। জয়নালও বাসা ছেড়ে দেন।
তিনি বলেন, সাব্বির স্ত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার পর জয়নালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাব্বির জয়নালকে চাকরি দেয়ার কথা বলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় তার বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর জয়নালকে হত্যার জন্য সাব্বির পরিকল্পিতভাবে তার গ্রামের বন্ধু আনোয়ার ও সুরুজকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট রাতে সাব্বির, আনোয়ার ও সুরুজ মিলে জয়নালকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর একটি পানির ড্রামে জয়নালের মরদেহ রেখে দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে সবাই পালিয়ে যান। গ্রেফতার এড়াতে তারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
সাব্বিরের স্ত্রীর সঙ্গে জয়নালের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা জানতে চাইলে র্যাব-১ এর সিও জানান, পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল না তবে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এরই জেরে সাব্বিরসহ তিনজন জয়নালকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
গ্রেফতারকৃতরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কীভাবে গ্রেফতার করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের ধরতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এর আধুনিক প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ